বেশ কিছুদিন ধরেই গোটা দেশের নজর ছিল ঝাড়খণ্ডের দিকে। সেখানে ‘অফিস অব প্রফিট’-এর অভিযোগ উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের বিরুদ্ধে। ঝাড়খণ্ডের খনি দফতর রয়েছে তাঁর অধীনে। সেখানে হেমন্ত নিজের নামেই একটি খনির লিজ পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। আর তার জেরেই টলমল করছিল হেমন্তের কুর্সি। তবে শেষ পর্যন্ত ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় শক্তিপ্রদর্শনে বাজিমাত করেছেন তিনি। সোমবার প্রধান বিরোধী দল বিজেপির বিধায়কেরা ওয়াকআউট করার পর আস্থা ভোটে জয়ী হয় তাঁর নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ অবশ্য বলছেন, ঝাড়খণ্ডে বিজেপি বিরোধী জোটের এই জয়ের নেপথ্যে বড় অবদান বাংলার পুলিশের।
তাঁদের মতে, জুলাই মাসে বাংলার পুলিশের অভিযানে ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়কের গ্রেফতারির কারণে পদ্ম-শিবিরের ‘তৎপরতা’ প্রকাশ্যে চলে এসেছিল। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ‘অপারেশন লোটাস’-এর মাধ্যমে বিজেপি যে ভাবে বিধায়ক ভাঙিয়ে কর্ণাটকে এইচডি কুমারস্বামী, মধ্যপ্রদেশে কমলনাথ, মহারাষ্ট্রে উদ্ধব ঠাকরেকে গদিচ্যুত করেছে, ঝাড়খণ্ডে তা সম্ভব হয়নি। বাংলার পুলিশের থেকে সময়োচিত বার্তার জেরে ‘ঘর গুছনোর’ সময় পেয়েছে হেমন্তের ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) এবং সহযোগী কংগ্রেস, আরজেডি, জেএমএম। ফলে ভেস্তে যায় বিজেপির পরিকল্পনা।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুলাই রাতে হাওড়ার পাঁচলায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে ঝাড়খণ্ডগামী একটি গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বান্ডিল বান্ডিল টাকা। সঙ্গে ছিল সোনাদানাও। ওই গাড়িতে ছিলেন ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়ক ইরফান আনসারি, রাজেশ কচ্ছাপ নমন বিক্সল কোঙ্গারি। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অভিযানে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা-সহ তিন কংগ্রেস বিধায়কের গ্রেফতারির পরেই ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ উঠেছিল। ঝাড়খণ্ডেও ‘অপারেশন লোটাস’ শুরু করেছে বলে দাবি করে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। পাশাপাশি, ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস পরিষদীয় দলে ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত সাসপেন্ড করা হয় ধৃত তিন বিধায়ককে।
রাজ্য পুলিশের সিআইডির তদন্তেও সেই অভিযোগের সারবত্তা উঠে আসে। জানা যায়, পাঁচলায় গ্রেফতার হওয়ার আগে ওই তিন বিধায়ক এক রাতের জন্য গুয়াহাটিতে গিয়েছিলেন। আর তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা পুরো ‘অপারেশন’ পর্ব পরিচালনা করছেন। বিজেপি অবশ্য গোড়া থেকেই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু ঘটনার তদন্তে আসামে গিয়ে হিমন্তের পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় সিআইডিকে। একই ভাবে ওই ঘটনায় বেআইনি ভাবে অর্থ লেনদেনে অভিযুক্ত এক ব্যবসায়ীর খোঁজে দিল্লী গেলে সেখানেও তাদের বাধা দেয় কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণাধীন দিল্লী পুলিশ। ফলে বিজেপির দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।