গত সপ্তাহেই জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার ঘোষণা করেছেন, রাজ্যের নতুন ভোটার তালিকায় আনুমানিক ২৫ লাখ নতুন ভোটারের নাম যুক্ত হতে যাচ্ছে। যদিও ভোটার তালিকায় নাম তোলার আবেদন গ্রহণের পর দেখা গিয়েছে আবেদনকারীদের আনুমানিক ২৫ লাখ ভোটার জম্মু-কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা নন। এ নিয়ে বিরোধীদের বক্তব্য, এই আবেদনকারীদের মধ্যে আছেন সেনা, আধা সেনার অফিসার, জওয়ানেরা। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ওই রাজ্যে বসবাসকারী অ-কাশ্মীরি। তাদের মধ্যে পর্যটনের ব্যবসায় যুক্ত বহু মানুষ আছেন।
বিষয়টি জানাজানি হতেই তুমুল শোরগোল পড়ে গিয়েছে উপত্যকা জুড়ে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লার নেতৃত্বে গত পরশু বিরোধীদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে আদালতে যাওয়া হবে। ফারুক নিজেই মামলা করবেন বলে জানানো হয়। কাশ্মীরের বিজেপি বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, ভোটার তালিকাকে হাতিয়ার করে রাজ্যটিকে অ-কাশ্মীরিদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সাফাই গেয়ে নির্বাচন কমিশন মনে করিয়ে দিয়েছে, বিষয়টি মোটেও তাদের হাতে নেই। জন্মু-কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা (সংবিধানের ৩৭০ নন্বর অনুচ্ছেদ) বাতিল হওয়ার পর কমিশনকে নতুন পথে যেতে হয়েছে। আগের নিয়মে জম্মু-কাশ্মীরের জন্য লোকসভা ও বিধানসভার জন্য দুটি পৃথক তালিকা তৈরি করতে হত। এবার তা হয়নি। বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর তার আর প্রয়োজন নেই।
কমিশন জানিয়েছে, সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ বহাল থাকার আগে বিধানসভা ভোটে ভিন রাজ্যের বাসিন্দারা ওই রাজ্যের ভোটার হতে পারতেন না। একমাত্র ওই রাজ্যের আদি বাসিন্দারাই বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিতেন। কিন্তু লোকসভার ক্ষেত্রে সেই বিধিনিষেধ বলবৎ ছিল না। এবার বিধানসভা ভোটের জন্য যে ভোটার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে তাতে আর আগের ভেদাভেদ থাকছে না। ফলে জম্মু-কাশ্মীরে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী যে কোনও ব্যক্তিই ভোটার তালিকায় নাম তোলার অধিকারী হয়েছেন দুই নির্বাচনের জন্য। জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি কোনও এলাকায় ছয় মাসের বেশি টানা বসবাস করলে ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য তাঁকে সেখানকার সাধারণ বাসিন্দা বলে গণ্য করা হয়। ২০১৯-এর ৫ অগস্ট কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে গোটা দেশের নিয়ম জম্মু-কাশ্মীরেও বলবৎ হয়েছে।
তবে কমিশনের এই ব্যাখ্যা সত্ত্বেও কিছু প্রশ্নের জবাব মিলছে না সেনা ও আধা সেনার জওয়ান ও অফিসারদের নাম ভোটার তালিকার তোলায়। কারণ, প্রতিরক্ষার কাজে যুক্ত কর্মীদের নিজের রাজ্যে নিজের বিধানসভা এলাকার ভোটার তালিকায় নাম তোলার সুযোগ আগের মতোই রয়েছে এবং তাঁরা সার্ভিস ভোটার হিসাবে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থায় ভোট দিতে পারেন। বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপি জম্মু-কাশ্মীরে ক্ষমতা দখল করতে সেনা, আধা সেনাকে ভোটার বানিয়ে নির্বাচনী স্বার্থ পূরণ করতে চলেছে। অতীতে কোনও রাজ্যে এমন হয়নি। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গি দমনে সেনা ও আধা সেনার জওয়ানেরা বছরের পর বছর কর্মরত থাকেন। কিন্তু কোথাও তাঁদের সেই এলাকার ভোটার করা হয়নি।