প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। বিগত কয়েক বছরে তাঁকে একাধিক বার স্বপ্নের ফেরিওয়ালা অবতারে দেখেছে দেশবাসী। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তা্র কোনও ‘সঙ্কল্প’ই রাখতে পারেননি। আর তাই নিজের পিঠ বাঁচাতে এখন সব দোষ করোনা অতিমারির ঘাড়েই চাপাচ্ছেন তিনি।
মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ২০২২-এ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির সময় দেশের চাষিদের আয় দ্বিগুণ হবে। দেশের সকলের জন্য পাকা বাড়ি হবে। প্রথম বুলেট ট্রেন ছুটতে শুরু করবে। ২০২২-এ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে ভারতকে দারিদ্র, ধুলো, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ, জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্ত করারও ‘সঙ্কল্প’ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ৭৬-তম স্বাধীনতা দিবসের আগে বিরোধীরা মোদীর সেই সব প্রতিশ্রুতি পূরণের কী হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এ নিয়ে মোদী সরকারের কর্তাব্যক্তিরা টুঁ শব্দ করতে রাজি নন। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, কোথায়, কতখানি লক্ষ্য পূরণ করা গিয়েছে, তার মধ্যে না গিয়ে গোটা ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়ে ফেলারই কৌশল নেওয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন মন্ত্রকে খোঁজখবর করলে বলা হচ্ছে, কোভিড ও লকডাউনের জন্য দীর্ঘদিন কাজকর্ম আটকে থাকার ফলেই ওই সব লক্ষ্য পূরণ হয়নি। অর্থাৎ সব দোষ করোনার!
তাতে অবশ্য প্রশ্নের তির থামছে না। যেমন কংগ্রেস মুখপাত্র গৌরব বল্লভ বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীকে পুরনো প্রতিশ্রুতিগুলো মনে করিয়ে দিতে চাই। চাষিদের আয় দ্বিগুণ, সকলের জন্য বাড়ি, বুলেট ট্রেন, আরও অনেক কিছু।’ প্রশ্ন উঠেছে বিজেপির অন্দর থেকেও। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী প্রশ্ন তুলেছেন, চমোদী তাঁর ২০১৭-য় স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সকলের জন্য বাড়ি হবে, চাষিদের আয় দ্বিগুণ হবে, বুলেট ট্রেন চালু হবে। এ সব কি হয়েছে? এ বছর ১৫ অগস্টে তিনি কী প্রতিশ্রুতি দেবেন?’
কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী কি তা হলে চাষিদের আয় দ্বিগুণ করা বা সকলের জন্য পাকা বাড়ির লক্ষ্য পূরণে নতুন সময়সীমা স্থির করবেন? সরকারি হিসেব বলছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় সকলের জন্য বাড়ির কাজে শহরে মাত্র ৫০ শতাংশ লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় ৬৫ শতাংশ। দুই ক্ষেত্রেই লক্ষ্য পূরণের সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৪-এর মার্চ করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৬-য় মোদী বলেছিলেন, ২০২২-এর মধ্যে চাষিদের আয় দ্বিগুণ করে দেবেন।
সম্প্রতি সংসদে কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর বলেছেন, চাষিদের আয় অনেক গুণ বেড়েছে। কিন্তু কোথা থেকে কতখানি বেড়েছে, তার হিসেব মেলেনি। ২০১৬-য় কৃষক পরিবারের গড় মাসিক আয় ছিল ৮,৯৩১ টাকা। মুম্বই থেকে আমদাবাদ, দেশের প্রথম বুলেট ট্রেন চালুর লক্ষ্য আগেই ২০২৩-এর ডিসেম্বর করে দেওয়া হয়েছিল। এখন তা আরও পিছিয়ে ২০২৭ হয়েছে।
বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৭ সালের ৯ অগস্ট ‘অগস্ট ক্রান্তি’ আন্দোলনের ৭৫-তম বর্ষপূর্তিতে মোদী সরকার বিজ্ঞাপন দিয়ে ২০২২-এ স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে আধডজন সমস্যা থেকে ভারতকে মুক্ত করার সঙ্কল্প করেছিল। মোদী বলেছিলেন, দারিদ্র, ধুলো, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ, জাতপাত, সাম্প্রদায়িকতা থেকে দেশকে মুক্ত করতে আগামী পাঁচ বছর ‘সঙ্কল্প থেকে সিদ্ধি’-র সময়। এই লক্ষ্য পূরণ করতে নীতি আয়োগ ‘নিউ ইন্ডিয়া@৭৫’ নামের পরিকল্পনাও তৈরি করেছিল।
সেই লক্ষ্য কতখানি পূরণ হয়েছে? নীতি আয়োগেরই সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, দেশের ২৫ শতাংশ মানুষ এখনও বহু মাপকাঠিতে দরিদ্র। দেশের রাজধানী দিল্লিরই বাতাসের মান ধুলোর জন্য ‘খুব খারাপ’ শ্রেণিভুক্ত। ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল’-এর দুর্নীতির সূচকে ভারত ১৮০টি দেশের মধ্যে ৮৫-তম স্থানে। বিরোধীদের বক্তব্য, জাতপাত, সন্ত্রাসবাদ, সম্প্রদায়িকতার সমস্যা বোঝাতে কোনও পরিসংখ্যানের প্রয়োজন নেই। বিজেপি নিজেই সাম্প্রদায়িকতা, জাতপাতের রাজনীতি করে চলেছে।