দু’বছর করোনার বাতাবরণের পর অবশেষে পালিত হল শহীদ স্মরণ। তাই স্বাভাবিকভাবেই উত্তেজনা তুঙ্গে সাধারণ মানুষের। সেই একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এর হুংকার, ‘২০২৪-এ মানুষের বৃষ্টিতে ভেসে যাবে যাবে বিজেপি।” আবারও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সম্ভব নয় বিজেপির পক্ষে চ্যালেঞ্জ তৃণমূল সুপ্রিমো। একুশের মঞ্চ থেকে তৃণমূলের পাখির চোখ ২০২৪-এর লোকসভা ভোট। শহিদ মঞ্চ থেকে সেই সুরই বেঁধে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন ভাষণের আগাগোড়া টার্গেটে রইল কেন্দ্রীয় সরকার। মুড়িতে জিএসটি, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়া থেকে শুরু করে সেনায় অগ্নিবীরদের নিয়োগকে বিঁধলেন নেত্রী। সরাসরি নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দেশ্য করে নেত্রীর তোপ, ”আমাদের গরীবের প্রধানমন্ত্রী চাই বিত্তবানদের নয়।” প্রথমেই জিএসটি নিয়ে সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, মুড়ির মতো সাধারণের খাবারেও জিএসটি আসলে পেটে লাথি। শহিদ মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ”মুড়িতে জিএসটি বসিয়েছে। এক থালা মুড়ি খাব তারও উপায় নেই। বিজেপির বন্ধুরা মুড়ি খাবেন না। ইডি-সিবিআই ঘরে এলে মুড়ি খেতে দেবেন। মুড়িতে কত জিএসটি। মিষ্টিতেও জিএসটি। চিঁড়েতে জিএসটি। দইতে জিএসটি। লস্যিতে জিএসটি, নকুলদানাতেও বাতাসায় কত জিএসটি। মানুষ খাবে কী!”
এখানেই শেষ নয়, তিনি বলেন, ”রোগী বিছানায় ভর্তি হলেও জিএসটি। বেড ভাড়ায় জিএসটি। মরে গেলে কত জিএসটি। কাটা ঘায়ে কত জিএসটি। ” মুড়ি নিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদে উপস্থিত জনতার থেকে মুড়ি চেয়েও নেন নেত্রী। মঞ্চ থেকে সু্প্রিমোর হুঙ্কার, ”আমাদের মুড়ি ফিরিয়ে দাও নইলে বিজেপি বিদায় নাও।” কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দেশে চর্চিত একের পর এক বিষয় নিয়ে আক্রমণ শানান নেত্রী। প্রশ্ন তোলেন এলপিজির দাম বৃদ্ধি নিয়ে। সঙ্গে ছিল জ্বালানির অগ্নিমূল্যও। তিনি বলেন, ”তৃণমূল থাকলে লক্ষ্মীর ভান্ডার পাবেন। ট্যাব পাবেন। তৃণমূল সরকার থাকলে ভাতা পাবেন, পেনশন, রেশন পাবেন। সারা দেশে ৪৫% বেকারত্ব বেড়েছে। আর বাংলায় ৪০% বেকারত্ব কমেছে। টাকার দাম সবচেয়ে কমে গিয়েছে। গ্যাসের দাম কত। ডিজেলের দাম কত। পাওয়ারের দাম কত।” কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির সমালোচনায় মমতা বলেন, ”সরকার ভাঙছে ব্যাঙ্ক বন্ধ করে দিচ্ছে পিএফের টাকা কোথায় যাচ্ছে জানি না। কলকাতা থেকে সবচেয়ে ট্যাক্স তুলে নিয়ে যায়। চায়ের হেডকোয়ার্টার বাংলা। সমস্ত পাবলিক সেক্টর বন্ধ। এয়ার ইন্ডিয়া, কোল ইন্ডিয়া বন্ধ। লাখ লাখ চাকরি ছাঁটাই হয়ে গিয়েছে।”
তৃণমূল নেত্রী শহিদ মঞ্চ তোলেন অগ্নিবীর প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “ভারতীয় সেনাকে নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা! সেনায় লোক নিয়োগ না করে অগ্নিবীর নিয়োগ করছে বিজেপি। অগ্নিপথ মানে কী? যাঁরা পরে সশস্ত্র ক্যাডার হয়ে কাজ করবেন? সেনাবাহিনীর কোনও বিকল্প হয় না। সেই সেনাকে বঞ্চিত করেই অগ্নিপথ প্রকল্প করা হয়েছে। সেনায় যুবকদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে না কেন? এতেই শেষ নয়, সম্প্রতি মহারাষ্ট্র সরকারের পটপরিবর্তনে বিজেপির ভূমিকা নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন নেত্রী। শিবসেনায় ভাঙন ধরানোর পিছনে বিজেপিরই হাত ছিল বলে দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ওরা ঘর ভাঙে। নির্বাচিত সরকারকে ভেঙে ফেলার চক্রান্ত করে। উপস্থিত লাখো মানুষের ভিড়ের উদ্দেশে মমতার বার্তা, ”বিজেপির ব্রেনটা মরুবৃক্ষ। বুদ্ধির ঢিপিটা মরুভূমি হয়ে গিয়েছে। ২৪-এ একটাই দল থাকবে। আজ এত বৃষ্টি এত ঝড় জলেও যখনও আপনাদের কাউকে সরাতে পারেনি, তখন জানবেন মানুষের বৃষ্টি ২০২৪-তে বিজেপিকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের মেরুদণ্ড সোজা ওদের মেরুদন্ড বাঁকা। আমরা মাথা উঁচু করে চলি। ওদের মেরুদণ্ডের একদিকে আছে সিবিআই অন্যদিকে ইডি। একদিকে আছে আয়কর, অন্যদিকে জিএসটি।”