দীর্ঘ যুগের অবসান। নেমে এল শোকের ছায়া। লন্ডনেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের সময়ে গর্জে উঠেছিল তাঁর কলম। শহিদদের স্মরণে লিখেছিলেন “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…”। কালজয়ী হয়েছিল সেই গান। বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গীতিকারের প্রয়াণের সংবাদে সারা দেশেই শোকের আবহ। ১৯৩৪ সালের ১২ই ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়ার চৌধুরীবাড়িতে জন্ম আবদুল গাফফার চৌধুরীর। ছাত্র অবস্থাতেই লেখালেখিতে হাতেখড়ি। ১৯৪৯ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সম্পাদিত মাসিক ‘সওগাত’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরের বছর ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশ হলে গাফফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। ১৯৫২ সালে সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’। ওই বছরই রক্তক্ষয়ী ভাষা আন্দোলনের সময়ে লেখেন “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।” ১৯৫৬ সালে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকায় যোগ দেন তিনি।
এরপর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য গাফফার চৌধুরী সপরিবারে কলকাতা আশ্রয় নেন। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক ‘জয়বাংলা’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘আনন্দবাজার’ ও ‘যুগান্তর’ পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ‘দৈনিক জনপদ’ বের করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজেরিয়ায় ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান তিনি। দেশে ফেরার পর স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় ১৯৭৪ সালের অক্টোবর মাসে লন্ডনে যান। তার পরেই তাঁর প্রবাস জীবন শুরু হয়। সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশী’ সহ প্রায় ৩০টি বই লিখেছেন। বেশ কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটকও লিখেছেন। তার মধ্যে রয়েছে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’, ‘একজন তাহমিনা’ ও ‘রক্তাক্ত আগস্ট’। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জীবনে বহু পুরস্কার পেয়েছেন। ১৯৬৩ সালে পান ‘ইউনেস্কো’ পুরস্কার। তাছাড়া বাংলা আকাদেমি, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ আরও অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। গাফফার চৌধুরীর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।