সুপ্রিম কোর্টে পর পর তিন বার রাষ্ট্রদ্রোহ আইন নিয়ে ভিন্ন অবস্থান জানিয়েছে কেন্দ্র৷ স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে মোদী সরকার। কিন্তু কেন তাদের এই দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাব? কেন সরকারের জবাব তলব করে নোটিসের জারির নয় মাস পর শীর্ষ আদালতের থেকে অতিরিক্ত সময় চাওয়া হচ্ছে হলফনামা দেওয়ার জন্য? কেনই বা ব্রিটিশ জমানার তৈরি আইনকে সমর্থন? আর পর নতুন হলফনামার মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন পুনর্বিবেচনার আশ্বাস? বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মতাদর্শগত পার্থক্যের জন্যই নাকি কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্তহীনতা!
বিজেপি সূত্রের দাবি, গত বছর বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের সময়েও একই ধরনের মতপার্থক্য দেখা গিয়েছিল মোদী-শাহের মধ্যে, যার জেরে রীতিমতো চাপে পড়তে হয় সরকারকে৷ বিক্ষোভকারী কৃষকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেও সরকার তাঁদের মনের মতো কোনও প্রস্তাব পেশ করতে পারেনি। শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেন, দেশবাসীর কাছে ক্ষমাও চান। সূত্রের দাবি, রাষ্ট্রদ্রোহ আইনকে কেন্দ্র করেও একই রকম পরিস্থিতির উদ্রেক হয়েছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতির রাশ নিজের হাতে তুলে নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সরকারি সূত্রে খবর, রাষ্ট্রদ্রোহ আইন নিয়ে শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রের অবস্থান কী হবে, তার পুরোটাই দেখভাল করছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আমলারা৷ বিষয়টি নজরদারি করছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজে৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তদারকিতেই নোটিস জারি হওয়ার ৯ মাস পরেও শীর্ষ আদালতে নিজেদের অবস্থান জানানোর জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়েছিলেন সরকারপক্ষের প্রতিনিধি সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা৷ এর জন্য প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের সদস্য বিচারপতি হিমা কোহলির ভর্ৎসিতও হতে হয়েছিল তাঁকে৷ এর পর প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের সামনে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন কেন্দ্রীয় সরকারের অপর প্রতিনিধি অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল৷
এই প্রসঙ্গেই কয়েকটি ক্ষেত্রে ‘সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা’-র প্রয়োজন আছে বলে জানান বেণুগোপাল৷ এর পরই কেন্দ্রীয় সরকার হলফনামা দিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের সপক্ষে অবস্থান জানায়৷ সরকারি এবং বিজেপি, দু’টি সূত্রেই দাবি, এখান থেকে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরিবর্তে গোটা বিষয়টির দেখভাল শুরু করে আইন মন্ত্রক, নজরদারির দায়িত্বে থাকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বা পিএমও৷ এর পরই রাতারাতি সুপ্রিম কোর্টে নতুন হলফনামা দিয়ে কেন্দ্র জানায়, রাষ্ট্রদ্রোহ আইন পুনর্বিবেচনা করতে আগ্রহী মোদী সরকার৷