২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন দেশে। আর তার আগে ওবিসি সমাজের মন জয় করতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ওই সমাজের কোনও মহিলাকে প্রার্থী করার পরিকল্পনা ছিল মোদী-শাহদের। কিন্তু বাধ সেধেছে অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানার দলগুলি। তারা বিরোধী জোটের প্রার্থীকেই সমর্থন দিতে উদ্যোগী হয়েছে। আর তাতেই তড়িঘড়ি কৌশল বদলের পথে গেরুয়া শিবির। নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডুর নাম নিয়ে। পদ্ম শিবিরের আশা, অন্ধপ্রদেশের ওই নেতাকে রাষ্ট্রপতি ভোটে প্রার্থী করা হলে সমর্থনের প্রশ্নে এগিয়ে আসবে দক্ষিণের দলগুলি। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি পদে নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে যে ৯ হাজার ভোটের ঘাটতি রয়েছে, তা কেন্দ্রের শাসক জোট পূরণ করে ফেলতে পারবে।
সম্প্রতি তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর) এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু রাজনীতির অনেকের মতে, কেসিআর ধারাবাহিক ভাবে বিজেপি বিরোধিতায় সরব। ফলে তাঁর পক্ষে বিজেপির রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে কতটা সমর্থন করা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আবার জগনের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশায় বিজেপি নেতৃত্ব। মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের গোড়ায় সমর্থনের প্রশ্নে বিভিন্ন বিষয়ে বিজেপির পাশে দাঁড়ালেও, কৃষি বিল সংসদে পাশ হওয়ার পর থেকেই বিজেপি বিরোধিতা শোনা যাচ্ছে অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রীর গলাতেও। এদিকে, অ-বিজেপি দলগুলিকে কাছে টানতে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন চন্দ্রশেখর।
সূত্রের মতে, মে মাসেই তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, বিজেডি, ডিএমকে, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং প্রয়োজনে জগন্মোহনের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী নিয়ে আলোচনায় বসতে চলেছেন চন্দ্রশেখর। বর্তমানে রাষ্ট্রপতির জেতার পথে বাঁধা হল বিজেপির হাতে কম থাকা ৯১৯২টি ভোট। অতীতে চন্দ্রশেখরের দল বা বিজেডি বিজেপির পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এ যাত্রায় কী হবে তা নিয়ে সংশয়ে বিজেপি শিবির। এই আবহে অন্ধ্রপ্রদেশের ওই ভূমিপুত্র বেঙ্কাইয়াকে রাষ্ট্রপতি পদে দাঁড় করালে জগন তো সমর্থন করতে বাধ্য, উপরন্তু বেঙ্কাইয়াকে সমর্থনের প্রশ্নে চাপ বাড়বে তেলঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রীর উপরেও। তা ছাড়া, বেঙ্কাইয়া দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতিতে থাকার সুবাদে সব দলের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। উপরন্তু তিনি সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ। রাষ্ট্রপতি পদে তাঁকে বেছে নিলে আপত্তি থাকবে না সঙ্ঘ পরিবারেরও।
রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর দৌড়ে বেঙ্কাইয়া নায়ডু থাকলেও, এখনও বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের ওই পদে প্রথম পছন্দ ওবিসি সমাজের কোনও মহিলা প্রার্থী। দেশের ভোটারদের মধ্যে ৪০ শতাংশ ওবিসি সমাজের। যাঁরা এ বার উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন বিজেপিকে। মোদী খুব ভাল করেই জানেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল করতে গেলে তাঁর দলকে ওবিসি সমাজের সমর্থন পেতেই হবে। তাই এক দিকে ওবিসি সমাজের জন্য সংরক্ষণ প্রশ্নে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি, দেশের শীর্ষ পদে ওবিসি সমাজের কোনও মহিলা নেত্রীকে প্রার্থী করতে ইচ্ছুক বিজেপি নেতৃত্ব।