এবার উত্তরবঙ্গের ২.৪২ লক্ষ হেক্টর জমিকে সেচের আওতায় আনতে তৎপর হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। উত্তরবঙ্গের সেচ ব্যবস্থা অনেকটাই নির্ভর করে তিস্তার উপর। তবে নানা কারণে দীর্ঘদিন থমকে রয়েছে তিস্তা ব্যারাজ বৃহৎ সেচ প্রকল্পের কাজ। এ নিয়ে কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক হয়েছে রাজ্যের। সেখানেই তিস্তা ব্যারাজ বৃহৎ সেচ প্রকল্প নিয়ে সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত হয়। তাতে নদীর জলস্তর থেকে শুরু করে এখনকার সামগ্রিক পরিস্থিতি যাচাই করা হবে। এর উপর ভিত্তি করেই এই প্রকল্পের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। প্রকল্পটিতে মোট ৩ লক্ষ ৪২ হাজার হেক্টর জমিকে সেচের আওতায় আনার কথা। ১৯৭৬ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১ লক্ষ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে। এবার বাকি ২ লক্ষ ৪২ হাজার হেক্টর জমিকেও সেচের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হল। নদীতে জলস্তর কতটা, খালের অভাব মেটাতে পাইপলাইনের মাধ্যমে সেচের ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেক্ষেত্রে পরিকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ কীভাবে হবে, এসব খতিয়ে দেখতেই সমীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়েই ওই সমীক্ষা রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।
উল্লেখ্য, থমকে থাকা তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু হলে উপকৃত হবেন লক্ষাধিক মানুষ। ১৯৭৬-‘৭৭ সালে মাত্র ৬৯.৭২ কোটি টাকা দিয়ে শুরু হয় এই প্রকল্প। ২০০৮ সালে এই প্রকল্পের খরচ পুনর্মূল্যায়ন করে ২,৯৮৮.৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। ২০১০ সালে এটিকে জাতীয় প্রকল্প হিসাবে ঘোষণা করা হয়। প্রথমে কেন্দ্র ৯০ শতাংশ খরচ বহনের আশ্বাস দিলেও, পরে তা কমিয়ে ৭৫ শতাংশে নামিয়ে আনে। এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১,৪৬৮ কোটি টাকা। ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিকে সেচের আওতায় আনতে কোনও প্রকল্প হাতে নেওয়া হলে তাকে বৃহৎ সেচ প্রকল্পের অধীনে ফেলা হয়। দু’হাজার থেকে ১০ হাজার হেক্টর হলে তাকে মাঝারি সেচ প্রকল্প এবং দু’হাজারের কম হলে তাকে ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প বলা হয়। সেই নিরিখেই এই প্রকল্পকে তিস্তা বৃহৎ সেচ প্রকল্প বলা হচ্ছে। ২০০৮ সালে বরাদ্দ পুনর্মূল্যায়ন করা হলেও, এতদিন পাইপলাইনের মাধ্যমে সেচের কথা ভাবা হয়নি কেন? রাজ্যের আধিকারিকদের মতে, তখন দেশের কোথাও এই ব্যবস্থা রূপায়ণের সুযোগ ছিল না। ইতিমধ্যে পুরুলিয়ায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে রাজ্যের সেচদপ্তর। খাল কেটে জল নিয়ে যেতে হলে প্রচুর জমি লাগবে। অথচ বিকল্প হিসেবে পাইপলাইনের মাধ্যমে সেচ প্রকল্পে জমি লাগবে বড়জোর এক শতাংশ।