একুশের ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই বঙ্গ-বিজেপির অন্দরে চলছে মুষল পর্ব। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ, কলকাতায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে বৈঠক, বনগাঁয় চড়ুইভাতি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ, লোকাল ট্রেন থেকে কলকাতার রাজপথে পোস্টার— নানা ভাবে দলের একাংশের বিরুদ্ধে সরব দলেরই অন্য অংশ। এরই মধ্যে একের পর এক উপনির্বাচন, পুরভোটে হারের মুখ দেখেছে দল। একই ছবি আসানসোল এবং বালিগঞ্জের উপনির্বাচনেও। আর এরই মধ্যে এবার এক দিনে পদ ছাড়লেন ১৩ জন। রবিবার ছুটির দিনে এই ছিল বঙ্গ বিজেপির সংগঠনে কাঁপন ধরানো খবর।
যদিও তাতেও তেমন হেলদোল নেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। শুধু রাজ্য দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীকে দিল্লীতে তলব করেই আপাতত কর্তব্য সারতে চাইছে তাঁরা। এমনই অভিযোগ বিজেপির রাজ্য পার্টির ভিতরে ঘোরাফেরা করছে। রবিবার যাঁরা দলীয় পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের বেশিরভাগেরই অভিযোগ, দল তাঁদের কোনও কাজ দিচ্ছে না। এভাবে গুরুত্বহীন হয়ে থেকে সংগঠনে কাজ করা মুশকিল। তাই এই সিদ্ধান্ত। ১৩ জনের মধ্যে একজন মুর্শিদাবাদের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ। তিনি রাজ্য কমিটি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁকে সমর্থন করে একই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছেন আর এক বিধায়ক সুব্রত মৈত্র। বাকিরা নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার।
দুই জেলাতেই অভিযোগের তির শীর্ষ নেতাদের দিকে। ভোট না থাকা সত্ত্বেও কেন সেখানে সংগঠনে এমন ধস, তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। মূল অভিযোগ, দল চলছে ব্যক্তি বিশেষের কথায়, মর্জিতে। অন্যদিকে, বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের পাল্টা বক্তব্য, সম্পূর্ণ বাজে কথা। দল সবাইকে উপযুক্ত মর্যাদা দিচ্ছে। আসলে অন্য মতলব নিয়ে দলকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি তৃণমূলও। রাজ্যের শাসক দলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, বিজেপি চলছে তৎকাল ব্যবস্থায়। তৎকাল বিজেপির দাপটে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে আদিরা। অন্যদিকে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে আসা জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, মণ্ডল (ব্লক) চালানোর যোগ্যতা নেই, এমন লোককে রাজ্য চালানোর ভার দিলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
গত শনিবারই বালিগঞ্জ বিধানসভা এবং আসানসোল লোকসভায় উপ নির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। এরমধ্যে আসানসোল লোকসভা দলের দখলে ছিল। স্বাভাবিকভাবেই উপনির্বাচনে দু’বারের জেতা আসন হাতছাড়া হওয়ায় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিরক্ত। কারণ, লোকসভার আসন হাতছাড়া হলে গোটা দেশে তার প্রভাব পড়ে। বঙ্গ বিজেপির হাল ফেরাতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কী করছে? রাজ্য নেতাদের বড় অংশের অভিযোগ, পরিস্থিতির সঙ্গে মানানসই কোনও পদক্ষেপ করছে না। বিধানসভা ভোটের পর কেন্দ্রীয় নেতারা কেউ বাংলামুখো হচ্ছেন না। এক রাজ্য নেতার কথায়, খাতায়কলমে কৈলাশ বিজয়বর্গী এখনও বাংলার প্রধান পর্যবেক্ষক। কিন্তু রাজ্যে আসেন না। বিধানসভা ভোটের পর অমিত মালব্যকেও বাংলার ভার দেওয়া হয়। তাঁর অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় টুইটারে।