লখনউয়ের আলমনগরের রাজকুমার ইন্টার কলেজের বুথ। ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে অভয় সিং বলেছিলেন, আজকাল বিজেপির শক্তি নিয়ে যাবতীয় আলোচনায় আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাই বলি। উত্তরপ্রদেশে কী হবে জানা নেই। কিন্তু আমরা মনে করি নরেন্দ্র মোদী তাঁর রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছেন একজন নারীর কাছে। তিনি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন জানেন? প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, মোদীজি কোনওদিন মমতাকে হারাতে পারবেন না। ক্ষমতায় আসার পর মোদীজি বারংবার শুধু মমতাজির কাছে হেরেই চলেছেন। বাংলায় লোকসভা কিংবা বিধানসভা, কোনও ভোটেই তিনি মমতাজির থেকে বেশি আসন ছিনিয়ে নিতে পারেননি। সবথেকে বড় ধাক্কা গত বিধানসভা ভোটে। আমরা ভাবতেই পারিনি যে ওরকম জয় পাবেন তিনি। আমরা মনে করি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম বিরোধী নেত্রী যিনি মোদীজির আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দিয়েছেন। আর কেউই গেরুয়া শক্তির এত বড় ড্যামেজ করতে পারেনি।
বাংলার ভোটে ২০২১ সালে যা হল, সেটা বিজেপি বিরোধী দলগুলির কাছে একটা শিক্ষা। সীতাপুরের আইনজীবী রূপেশ যাদবের মত এমনই। গাজিপুর যাচ্ছেন ঠিকাদারির কাজে। তিনি বলছেন, সীতাপুরে নরেন্দ্র মোদী এসেছিলেন জনসভা করতে। সেই সভার পর সীতাপুরের সমাজবাদী পার্টির সমর্থকরা মোদীর জনসভা থেকে ফেরা বিজেপি কর্মী সমর্থকদের লক্ষ্য করে কী স্লোগান দিয়েছিল জানেন? জানতে চেয়েছিলেন রূপেশ যাদব। এক নিঃশ্বাসে তিনি নিজেই উত্তর দিয়ে বলেছিলেন, খেলা হবে! গ্রামেগঞ্জে সমাজবাদী পার্টির প্রচার গাড়িতে শোনা যাচ্ছে, খেলা হবে। সমাজবাদী পার্টিকে সমর্থন করে সভা করে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার আসছেন বারাণসীতে। কিন্তু এই সভাগুলির জন্য নয়। উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক চর্চায় বারংবার মমতার নাম উত্থাপিত হচ্ছে মোদীর রথ রুখে দেওয়ার কৃতিত্বের জন্যই।
ফৈজাবাদের নাম পাল্টে হয়েছে অযোধ্যা। কিন্তু এখনও শহরের সর্বত্র সাইনবোর্ড থেকে ফৈজাবাদকে মুছে দেওয়া সম্ভব হয়নি। একটা মধ্যপন্থার রাস্তা নিয়েছে ব্যবসায়ী মহল। তারা ফৈজবাদ লিখে ব্র্যাকেটে অযোধ্যা লিখে দিয়েছে। ফৈজাবাদ মিউনিসিপ্যাল মার্কেটের সামনের রাস্তায় থাকা ব্যাপার মন্ডল নিগমের অফিসে বসা ব্যবসায়ী সংগঠনের দফতরে ভোট নিয়ে আলোচনা চলছে তুঙ্গে। সেখানেই মহাজন সিং বলছিলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পারলে অখিলেশ যাদব পারবেন না কেন? মমতা গোটা দেশে টিকে আছেন আপসহীন নারীশক্তি হিসেবে। জয়ললিতার দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মায়াবতী ময়দান ছেড়ে দিচ্ছেন নিজেই। রাজনীতির ভরকেন্দ্রে একজনই শক্তিশালী নেত্রী টিকে আছেন। মমতা। পুরুষ রাজনীতিবিদদের বিপক্ষে ওই একজনই তো লড়াইয়ের ময়দানে আছেন। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন প্রান্তে মমতা সম্পর্কে একটা সম্ভ্রমের সুর শোনা যাচ্ছে রাজনীতির চর্চায়’।