স্বামীর ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবন, একের পর এক নির্বাচনে জয়, দলে উন্নতি— এমন অনেক কিছুরই সাক্ষী তিনি। তবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কও কোনও দিনই ছিল না তাঁর। স্বামী মারা যাওয়ার পর বাড়ি থেকে বেরনোও বন্ধ করে দিয়েছিলেন প্রয়াত বিজেপি নেতা উপেন্দ্র দত্ত শুক্লার স্ত্রী শুভাবতী শুক্লা। তাই তাঁর মনেই যে এত জেদ, বদলা নেওয়া স্পৃহা চাপা থাকতে পারে, কেউ কখনও ভাবতেই পারেনি। বিজেপি তো নয়ই, বিরোধীরাও নয়।
কিন্তু কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে আচমকাই একদিন ছেলেকে নিয়ে তিনি হাজির হন লখনউয়ে সমাজবাদী পার্টির সদর দফতরে। সেখানে পার্টি সুপ্রিমো অখিলেশ যাদবের হাত থেকে পতাকা হাতে তুলে নিয়ে বিধবার ঘোষণা, আমাকে গোরখপুরে টিকিট দিন। যোগীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই। সেদিনই ঠিক হয়ে যায়, গোরখপুরের নিরাপদ আসনে যোগীর মুখ্য প্রতিদ্বন্দ্বী স্বামীহারা ওই মহিলা।
প্রসঙ্গত, মাস খানেক আগেই বিজেপি ঘোষণা করেছে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রার্থী হবেন তাঁর জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বলে চিহ্নিত গোরখপুর আরবান কেন্দ্র থেকে। যেহেতু যোগী সেখানে বড় হয়েছেন। আবার তিনবার গোরখপুর লোকসভা আসন থেকে বিপুল ভোটে জিতেছেন এবং মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে পর্যন্ত গোরখনাথ মন্দিরের প্রধান মোহন্ত ছিলেন। তাই আপাতদৃষ্টিতে যোগী সহজেই জয় ছিনিয়ে নিতে পারবেন মনে হলেও বিধানসভা ভোটে তাঁর প্রথমবারের লড়াই কঠিন হতে চলেছে শুভাবতী শুক্লার ঘোষণায়।
শুভাবতীর স্বামী উপেন্দ্র দত্ত শুক্লা ছিলেন গোরখপুরে বিজেপির সবচেয়ে পুরনো নেতা। দু’বার সাংসদ এবং একবার বিধায়ক হওয়া ছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন ছিলেন উত্তরপ্রদেশ বিজেপির সহ-সভাপতি। কিন্তু ঠাকুর সম্প্রদায়ের মানুষ যোগীর সঙ্গে ব্রাহ্মণ উপেন্দ্রর কোনও দিনও সম্পর্ক মসৃণ ছিল না। এমনকী যোগীর ছেড়ে আসা গোরখপুর লোকসভা আসনের উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী উপেন্দ্রকে সাবোতাজ করে হারিয়ে দিয়েছিল যোগী-বাহিনী।
আর তাঁর মৃত্যুর পর প্রথমসারির বিজেপি নেতারা গোরখপুরের বাড়িতে গিয়ে শোক জানিয়ে এলেও যাননি মুখ্যমন্ত্রী। পৌঁছোয়নি তাঁর তরফে পুষ্প স্তবকও। স্বামী বেঁচে থাকতে রাজনীতির এসব মারপ্যাঁচ নিয়ে রা কাড়েননি শুভাবতী। কিন্তু জানতেন সবই। তাই গোরখপুরেই যোগী প্রার্থী হচ্ছেন জানার পর স্বামীর অপমানের বদলা নিতে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গোরখপুরের পথে পথে। অন্যদিকে, শুভাবতীকে প্রার্থী করে অখিলেশ ব্রাহ্মণ ভোটকে এককাট্টা করার কৌশল নিয়েছেন।