দলের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সাংগঠনিক দুর্বলতা ক্রমশই চাপ বাড়াচ্ছে পদ্মশিবিরের। যার জেরে পুরভোটের আগে বাড়ছে সমস্যা। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি পুরভোটের শেষ প্রচারে সকাল থেকে সবদলই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। নির্দল প্রার্থীরাও সাধ্যমতো প্রচারে জোর দিয়েছিলেন। সেখানে এদিন অনেকটাই ছন্নছাড়া ছিল বিজেপি। এ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। গত ক’দিন ধরে কলকাতা থেকে আসা রাজ্য নেতাদের নিয়ে প্রচারে ঝড় তোলার চেষ্টা করেছিল গেরুয়া শিবির। এদিন তাদের সেই রাজ্য নেতারা ছিলেন না। তাঁরা চলে যেতেই বিজেপির প্রচারে জয়ের জন্য মরিয়া ভাবও উবে যায়। শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ এদিন তাঁর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে নিজের প্রচারে বেরিয়েছিলেন। বাড়ি বাড়ি যান তিনি। কিন্তু, তাঁর সেই মিছিলে সেভাবে লোক চোখে পড়েনি। কার্যত একা একাই প্রচার করেন শঙ্কর ঘোষ। এখান থেকে তিনি যান ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী দীনেশ সিংয়ের সমর্থনে ভোট প্রচারে। সেখানেও তিনি প্রচার করেন হাতেগোনা কয়েকজনকে নিয়ে। তাঁদের পিছনে কয়েকটি টোটো ছিল। তাতে মাইক বাজিয়ে বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে ভোট চাওয়া হয়।
পাশাপাশি, ৫ নম্বর ওয়ার্ডেও দেখা গিয়েছে, বিজেপি প্রার্থী এলাকার কিছু মহিলা ও কচিকাঁচাকে নিয়ে মিছিল করছেন। বিকেলে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী শালিনী ডালমিয়ার সমর্থনে মিছিল বের হয়। কিন্তু, সেখানেও সেই উন্মাদনা বা জনসমাগম ছিল না। সেই তুলনায় এদিন সকালে ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থী যথাক্রমে মঞ্জুশ্রী পাল ও নান্টু পালের সমর্থনে যৌথ মিছিলে কিছুটা প্রাণ ছিল। সামগ্রিকভাবে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিজেপি প্রার্থীরা মিছিল, সভা করে শেষদিনের প্রচার নিষ্প্রভভাবেই শেষ করেন। আর শেষদিনের প্রচারে বিজেপির এই নীরবতা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বুধবার শিলিগুড়িতে আদি বিজেপির নামে যে ফ্লেক্স দেখা যায় তা পদ্ম শিবিরের চিন্তা বাড়িয়েছে। এমনিতেই তৃণমূল কংগ্রেসের জোরদার প্রচারে বিজেপি বুঝে গিয়েছে, বিধানসভা নির্বাচনের মতো ইভিএমে ভোট পড়বে না। তৃণমূল এগিয়ে গিয়েছে অনেকটাই। তার মাঝে বুধবারের ওই ফ্লেক্স বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ নতুন করে উস্কে দিয়েছে।
এপ্রসঙ্গে বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির এক পদাধিকারী বলেন, বুধবার শহরে যে ফ্লেক্স দেখা যায় তা কে বা কারা দিয়েছে, এখনও জানা যায়নি। তবে ওই ফ্লেক্সে বিজেপি প্রার্থীদের লড়াই অনেকটাই কঠিন করে দিয়েছে। কারণ, বিজেপির বসে যাওয়া পুরনো কর্মীদের যে ক্ষোভ বিক্ষোভ রয়েছে, তা ওই ফ্লেক্সের বক্তব্যের সঙ্গে মিলে গিয়েছে। বিজেপির বিদ্রোহী নেতা-কর্মীদের একটা বড় ভোট রয়েছে। তাঁরা যদি সত্যিই বিমুখ হন, তাহলে বিজেপির শিলিগুড়ি পুরভোটে সম্মানজনক ফল করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ দিকটিই বিজেপি জেলা নেতৃত্বকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। ওই ফ্লেক্স যে বিজেপিকে ছন্নছাড়া করে দিয়েছে তা এদিনের প্রচারে গেরুয়া শিবিরের ম্লান হয়ে থাকাই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।