ঘোর বিপাকে নরেন্দ্র মোদীর তত্ত্ব! বিরোধীদের আক্রমণে প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহার করা শব্দের সঙ্গে একমত হচ্ছে না তাঁর নিজের সরকারই। ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, রাজনীতির ময়দানে যেসব শব্দ তাঁর দল ব্যবহার করে, সেই ভাষা সংসদীয় মঞ্চেও ভুলতে পারছেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার রাজ্যসভায় কংগ্রেসকে সরাসরি ‘আরবান নকশাল’ হিসেবে দেগে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর তার ঠিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই মাওবাদ নিয়ে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে রাজ্যসভায় দাঁড়িয়েই জানিয়ে দিলেন, তাঁর সরকার ‘আরবান নকশাল’ শব্দ ব্যবহার করে না। তিনি বললেন, আমরা ‘আরবান নকশাল’ নামে কোনও টার্ম ব্যবহার করতে চাই না। এদিন তাঁকে মাওবাদ সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন বিজেপি এমপি রাকেশ সিনহা।
এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর বিজেপি এমপি প্রকাশ জাভরেকর প্রশ্ন করেন, “মাওবাদীদের বাইরে থেকে অস্ত্র সাপ্লাই করা হয়। শহরে বসে তাদের সমর্থন জোগানো হয়। এসব ঠেকাতে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে?” জবাবে মন্ত্রী বলেন, “আমরা আরবান নকশাল শব্দ ব্যবহার করি না। আমাদের কাছে শহর হোক কিংবা গ্রামীণ, উগ্র বামপন্থার বিপদ সর্বদাই উদ্বেগজনক। আমরা এই উগ্র বামপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। তাদের গতিবিধির উপর পুলিসি নজরদারি চালানো হয়। দেশের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ ঘোষণা করে, একনায়কতন্ত্র যারা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা গণতন্ত্রের শত্রু।” এই কারণেই আরবান নকশাল বলে কোনও পৃথক তকমা দিতে নারাজ মোদী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
মোদীকে গরিবের দেবদূত বলে বর্ণনা করলেও নিত্যানন্দ রাই তাঁর ব্যবহৃত শব্দ বা কয়েনেজ প্রত্যাখ্যান করায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছে গেরুয়া শিবির।
উল্লেখ্য, সরকার যদি ‘আরবান নকশাল’ তকমাটিকে মান্যতাই না দেয়, তাহলে রাষ্ট্রপ্রধান নিজেই কীভাবে এই শব্দবন্ধ ব্যবহার করেন? উঠছে প্রশ্ন। কীভাবে তিনি বলেন, কংগ্রেস নেতৃত্বকে আরবান নকশালদের তত্ত্ব সম্পূর্ণ গ্রাস করেছে? যে শব্দাবলি ভোটের সমাবেশে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বলার মতো, তা সংসদে দাঁড়িয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী ব্যবহার করেন কীভাবে? এই প্রশ্ন কিন্তু তুলেছে কংগ্রেস। বুধবার রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর পদের গরিমা ধ্বংস করেছেন নরেন্দ্র মোদী। কোন মঞ্চ কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, এই গণতান্ত্রিক শিক্ষাটাই তাঁর নেই। তাই এমন অসৌজন্যের ভাষা সংসদে ব্যবহার করেন।” এই গোটা পর্বে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এতকিছুর মধ্যে রাজ্যসভায় একজনও পূর্ণমন্ত্রী উপস্থিত নেই। ৭০ বছরে প্রথমবার। জয়রাম রমেশ এই নিয়ে পরে টুইটও করেছেন।
পাশাপাশি, সংসদে জবাবি ভাষণে কংগ্রেসকে ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’-এর সদস্য তকমাও দিয়েছেন মোদী। অথচ দু’বছর আগে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এদিনের মতোই হাল হয়েছিল ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’ নিয়ে প্রশ্নে। সেদিন লোকসভায় কংগ্রেস এমপি ভিনসেন্ট পালা এবং যশবীর গিল প্রশ্ন করেছিলেন, টুকরে টুকরে গ্যাং কাদের বলা হয়? এই শব্দের অর্থ কী? সেই প্রশ্নের উত্তরে লোকসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি বলেছিলেন, সরকারের কাছে টুকরে টুকরে গ্যাং সম্পর্কে কোনও ডেটা নেই। সরকার জানে না। অথচ, প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলছেন টুকরে টুকরে গ্যাংয়ের কথা। ফলত তৈরি হয় জট।