এদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মোদী সরকার ঘটা করে প্রচার করে গঙ্গা সাফাই অভিযানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘নমামিগঙ্গে’। কাজ কতটা হয়েছে? আদৌ হয়েছে কি? তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে প্রকল্পের বিজ্ঞাপন হয়েছে প্রচুর। আজ সংসদের অধিবেশন চলাকালীন এই মর্মেই প্রশ্ন করেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। কেন্দ্রীয় সরকারের জলশক্তি মন্ত্রীর কাছে তৃণমূল সাংসদ জানতে চান, “নমামিগঙ্গে প্রকল্পে প্রচার ও বিজ্ঞাপনের জন্যে এযাবৎ কত টাকা খরচ হয়েছে?” সেই সঙ্গেই গঙ্গায় ভাসমান মৃতদেহ নিয়ে সরব হন ডেরেক।(করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাদের মৃত্যু হয়েছে, দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় গঙ্গায় বিপুল সংখ্যাক এমন মৃতদেহ ভাসতে দেখা গিয়েছিল) গঙ্গায় সর্বমোট কতগুলো করোনা আক্রান্তের মৃত দেহ ফেলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে সেই পরিসংখ্যান চেয়েছেন তিনি। করোনাবিধি মেনে সেই মৃতদেহগুলো গঙ্গা থেকে সারানোর জন্যে সরকারের তরফে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাও জানতে চেয়েছেন সাংসদ।
এর উত্তরে উত্তরের বিজেপি সরকারের জলশক্তি মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বেস্বর টুডু জানিয়েছেন, নমামিগঙ্গে প্রকল্পে শুধুমাত্র প্রচার এবং বিজ্ঞাপন বাবদই ১২৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সেই সঙ্গে গঙ্গায় ভাসমান মৃতদেহের উপস্থিতির সত্যতা কার্যত স্বীকার করে নিয়ে মন্ত্রী জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের একাধিক জেলায় গঙ্গায় দগ্ধ, অর্ধদগ্ধ কোভিড আক্রান্তের মৃতদেহ ভাসতে দেখা গিয়েছে। জলশাক্তি মন্ত্রকের, ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা (এনএমসিজি) তরফে উক্ত রাজ্যদুটির কাছে ভাসমান মৃতদেহের সংখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে, সেই সঙ্গে মৃতদেহগুলো সরিয়ে ফেলে গঙ্গাকে দূষণ মুক্ত করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাও বিহার ও উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় জলশক্তি প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন এনএমসিজির তরফ থেকে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, বিহার, ঝাড়খন্ড এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবদের গঙ্গা সাফাই সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং জেলার গঙ্গা কমিটিগুলির কাছেও নির্দেশিকা চলে গিয়েছে। করোনা বিধি মেনে মৃতদেহকে গঙ্গা থেকে তুলে গঙ্গার পরিচ্ছন্নতাকে সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় দুটি জিনিস স্পষ্ট হয়েছে। প্রথমত; কত মৃতদেহ(করোনা আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গিয়েছেন) যে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে তার কোন তথ্য-পরিসংখ্যান কিছুই কেন্দ্রের কাছে নেই। দ্বিতীয়ত, গঙ্গা দূষণমুক্ত করার সমস্ত দায় রাজ্য সরকারগুলোর উপর চাপিয়ে দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছে মোদী সরকার।