দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর গত শুক্রবার গঙ্গাসাগর মেলার পক্ষেই রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আজ, মঙ্গলবার গঙ্গাসাগর যাত্রার ক্ষেত্রে আরও কড়া শর্ত চাপালেও মেলায় সবুজ সংকেতই দিয়েছে তারা। এবার সবুজ সংকের পেল বীরভূমের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী জয়দেব কেন্দুলি মেলাও। মঙ্গলবার বোলপুরের বিধায়ক জানিয়ে দিলেন, কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে যাতে আঘাত না লাগে, তার জন্য অল্প পরিসরে মকর সংক্রান্তিতে মেলার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা জানান, যাতে কারও রুজিরুটিতে টান না পড়ে, তার জন্যই মূলত সিদ্ধান্ত বদল করা হয়েছে। তাছাড়া সংক্রমণের মাঝেও ধর্মীয় ভাবাবেগকেও আঘাত করা চলে না। তাই ছোট করেই মেলা হবে। মন্দির সংলগ্ন এলাকায় অল্প কিছু দোকান বসবে। অন্যান্যবার পূণ্যার্থী, সাধু-সন্তদের ৫০-৬০টি আখড়া থাকে। এবার ভিড় এড়াতে থাকবে মাত্র দুটি। তাছাড়া পূণ্যার্থীদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য পুলিশ সদা তৎপর থাকবে। প্রত্যেকে কোভিডবিধি পালন করছেন কি না, সেদিকেও বিশেষ নজর রাখা হবে। থাকবে মকর সংক্রান্তির ভোরে অজয় নদে পুণ্যস্নান। যে জন্য অজয় নদীর ধারে দুটি ঘাট তৈরি করা হচ্ছে। কেবল স্থানীয় বাসিন্দারাই এই দুই ঘাটে স্নান করতে পারবেন। বাইরের পূণ্যার্থীদের স্নানের অনুমতি দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, বীরভূমের ইলামবাজার ব্লকের জয়দেব পঞ্চায়েতে অজয় নদের পাড়ে জয়দেব কেন্দুলি গ্রামে বসে এই মেলা। এখানেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন ‘গীত গোবিন্দ’-এর রচয়িতা কবি জয়দেব। বারো-তেরো শতকে রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিলেন তিনি। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তিতে জয়দেব মেলা বসে। নানা প্রান্তের কয়েক হাজার বাউল, ফকির এই মেলাতে ভিড় জমান। শতাব্দী প্রাচীন এই মেলার বৈশিষ্ট্য, এখানে শুধুমাত্র ধর্মপ্রচারের লক্ষ্যে নানা ধর্মের মানুষ আসেন। মেলার কয়েকদিন ধরে চলে ধর্ম প্রচার এবং আলোচনা। বাউল, কীর্তন এবং সুফি গানের আসরে ভিড় জমান দেশ, বিদেশ থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন আখড়াতে বিনামূল্যে মেলে দু’বেলা ভোগ। এবারও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও পুরোটাই হবে কোভিডবিধি মেনে।