বাইশ গজে আর নামতে দেখা যাবে না ‘ভাজ্জি’কে। দেখা যাবে না সেই ছন্দোবদ্ধ বোলিং অ্যাকশন। শুক্রবার একটি টুইটের মাধ্যমে নিজের এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করলেন হরভজন সিংহ। দীর্ঘ ২৩ বছর পর ক্রিকেট-কেরিয়ারে ইতি টানলেন তিনি। টুইটারে হরভজন লিখেছেন, “সব ভাল জিনিসই একদিন শেষ হয়। আজ আমি এমন একটা খেলাকে বিদায় জানাচ্ছি যা আমার জীবনে সব কিছু দিয়েছে। ২৩ বছরের এই লম্বা যাত্রা যারা সুন্দর এবং স্মরণীয় করে রেখেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে অনেক ধন্যবাদ।” একই সঙ্গে ইউটিউবে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন ‘টার্বুনেটর’। বলেছেন, “ভারতের জার্সি পরে যখনই খেলতে নেমেছি, তার থেকে বড় অনুপ্রেরণা আর ছিল না। কিন্তু, একটা সময় আসে যখন জীবনে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। জীবনে এগোতে হয়। গত কয়েক বছর ধরেই আমি একটা ঘোষণা করতে চাইছিলাম। ভাবছিলাম যে কবে আপনাদের সঙ্গে এই মুহূর্তটা ভাগ করে নেব। আজ আমি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। হয়তো অনেকদিন আগেই অবসর নিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারি ভাবে ঘোষণা করতে পারিনি।”
পাশাপাশি হরভজন জানিয়েছেন, “অনেকদিন ধরেই সক্রিয় ক্রিকেট খেলিনি। কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে আমার দায়বদ্ধতার কারণেই আগে ঘোষণা করতে পারিনি। কিন্তু মরসুমের মাঝপথেই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। বাকিদের মতো আমিও ভারতের জার্সিতেই অবসর নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সবার ভাগ্য সমান হয় না। কিন্তু যে দলের হয়েই আজ পর্যন্ত খেলেছি, তাদের হয়ে ১০০ শতাংশ দিয়েছি।” ১৯৯৮ সালে বাঙ্গালোরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টে অভিষেক হয় তাঁর। প্রথম ম্যাচে দু’টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। পরের মাসেই শারজায় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক দিনের ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। এরপর দু’ধরনের ফরম্যাটেই ভারতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠেন তিনি। বিশেষত দেশের মাটিতে অনিল কুম্বলের সঙ্গে স্পিন-জুটি গড়ে তোলেন।
উল্লেখ্য, কেরিয়ারের শুরুর দিকে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে তদন্তের মুখে পড়তে হয়েছিল হরভজনকে। পাশাপাশি শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগও উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজে কুম্বলে চোট পাওয়ায় তৎকালীন ভারতীয় দলের অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দলে নেন হরভজনকে। সেই সিরিজে দুরন্ত পারফরম্যান্স করেন তিনি। গোটা সিরিজে ৩২ উইকেট নেন। ইডেন গার্ডেন্সে তাঁর সেই ঐতিহাসিক হ্যাটট্রিক ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এখনও ঝলমলে। সেই ম্যাচে স্টিভ ওয়া’র দলের বিজয়রথ থামিয়ে দিয়েছিল ভারত। ভিভিএস লক্ষ্মণ এবং রাহুল দ্রাবিড়ের ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি হরভজনের তুখোড় বোলিং অজি শিবিরের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। কেরিয়ারে একাধিক বার চোটের কবলে পড়েছেন তিনি। ফিরেও এসেছেন। জীবনে পিছু ছাড়েনি বিতর্কও। ২০০৭-০৮ সালে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের সঙ্গে তাঁর সেই ঝামেলার কথা বহুল-চর্চিত। ক্রিকেটবিশ্বে যা পরিচিত ‘মাঙ্কিগেট’ নামে। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০১১ সালের ওডিআই বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও ছিলেন তিনি। দীর্ঘ টেস্ট কেরিয়ারে ৪১৭ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ওডিআই ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিয়েছেন যথাক্রমে ২৬৯ ও ২৫টি উইকেট। আইপিএলে খেলেছেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, চেন্নাই সুপার কিংস ও কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে।