রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়ানোর লক্ষ্যে সারা দেশের ১০৯টি রুটে ১৫১টি বেসরকারি ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। দেশজুড়ে সেই বেসরকারি ট্রেন চালাতে গিয়েই এবার প্রবল ধাক্কা খেতে হল মোদী সরকারকে। বুধবার লোকসভায় এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়ে দিলেন, “এই ইস্যুতে পর্যাপ্ত সাড়া মেলেনি। এবং যার জেরে পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়াই বাতিল করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলমন্ত্রক।” একে যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল।
উল্লেখ্য, এমনিতেই কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন প্রকল্পকে কেন্দ্র করে বিতর্ক চরমে। বিরোধীদের অভিযোগ, এই প্রকল্পের মাধ্যমেই দেশের সম্পদ বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছে বিক্রি করে দিতে চাইছে মোদী সরকার। ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন প্রকল্প ঘোষণার কিছুদিন আগেই রেল বোর্ড জানিয়েছিল, সারা দেশের ১০৯টি রুটে ১৫১টি ট্রেন পিপিপি মডেলে চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। যার অর্থ, ওই ১৫১টি ট্রেনের পরিচালনভার তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি হাতে। এই পরিস্থিতিতে রেলমন্ত্রীর এমন লিখিত জবাব সরকারকে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, সারা দেশের ১০৯টি রুটে ১৫১টি বেসরকারি ট্রেন চালানোর জন্য দেশব্যাপী ১২টি ক্লাস্টার তৈরি করেছিল রেলমন্ত্রক। যার মধ্যে অন্যতম ছিল হাওড়া ক্লাস্টার। লোকসভায় লিখিতভাবে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, “মুম্বই-২, দিল্লী-১ এবং দিল্লী-২ ছাড়া অন্য কোনও ক্লাস্টারের দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ায় সাড়া মেলেনি। ফলে টেন্ডার কমিটি আলোচনা সাপেক্ষে পুরো প্রক্রিয়াই খারিজ করার সুপারিশ করে। সেই সুপারিশ অনুমোদনও করা হয়েছে।” এই বেসরকারি ট্রেন চালানোর ব্যাপারে পর্যাপ্ত সাড়া না মিললেও রেলমন্ত্রক সম্প্রতি জানিয়েছে, থিম ভিত্তিক পর্যটনের প্রসারে যে ‘ভারত গৌরব’ ট্রেন চালানো হবে, তা বেসরকারি সংস্থার হাতেও তুলে দেওয়া হতে পারে।
দেশজুড়ে বেসরকারি ট্রেন চালিয়ে রেলের রাজস্ব আদায়ের পথ আপাতত বন্ধ হলেও টিকিটে কনসেশন বন্ধ করে এবং বেশি মূল্যে প্ল্যাটফর্ম টিকিট বিক্রি করে লাভ হয়েছে অনেকটাই। বুধবার লোকসভায় এ কথা জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী। ওই লিখিত উত্তরেই বলা হয়েছে, টিকিটের কনসেশন প্রদানের জন্য ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে রেলকে রাজস্ব ছেড়ে দিতে হয়েছে ২ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। রাজস্ব ছেড়ে দেওয়ার অর্থ হল, আখেরে রেলের ক্ষতি। কিন্তু সেই পরিমাণ ২০২০-২১ অর্থবর্ষে কমে হয়েছে মাত্র ৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ট্রেনের টিকিটে কনসেশন না থাকার জন্য উল্লিখিত দুটো আর্থিক বছরে রেলের রাজস্ব ছেড়ে দেওয়ার পরিমাণও কমেছে। যার অর্থ, রেলের ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে, ২০২০-২১ আর্থিক বছরে প্ল্যাটফর্ম টিকিট বেচে যেখানে রেলের আয় হয়েছে ১৫ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা, সেখানে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে (সেপ্টেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত) এর পরিমাণ ৬০ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা। ট্রেনের টিকিটে ছাড় ফেরানোর আপাতত কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়েছে রেল বোর্ড।