ফের বঞ্চনার শিকার বাংলা? রাজনৈতিক মহলে উঠছে এমনই প্রশ্ন। প্রায় দু’বছর ধরে ‘প্রধানমন্ত্রী মাতৃত্ব বন্দনা’ প্রকল্পে টাকা পাঠাচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যের কয়েক লক্ষ মা এই প্রকল্প থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। এই প্রকল্পে গর্ভবতী মায়েদের তিন ধাপে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রকল্পটি নতুনভাবে চালু হওয়ার পর তিন বছর ঠিক সময়েই টাকা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারপর রাজ্যে আর টাকা পাঠানো হয়নি।
রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্র অনুযায়ী, গর্ভবতীদের পুষ্টিকর খাবার ও চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ জোগানোর জন্য প্রকল্পটি চালু করা হয়েছিল। প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য গর্ভবতীদের প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। আধার কার্ড ও অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে নাম নথিভুক্ত করলেই প্রথমে এক হাজার টাকা দেওয়া হয়। প্রসবের আগে দু’হাজার টাকা দেওয়া হয়। সন্তান হওয়ার পর আবার অ্যাকাউন্টে দু’হাজার টাকা দেওয়া হয়। প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে নাম নথিভুক্ত হচ্ছে। কিন্তু টাকা আসছে না। করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেরই আর্থিক অবস্থা দুর্বলতর। এই পরিস্থিতিতে টাকা পাওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল বলে মনে করছেন আধিকারিকরা।
এপ্রসঙ্গে বেলডাঙার বিএমওএইচ সলমান মণ্ডল বলেন, “প্রকল্প চালু হওয়ার পর প্রথম তিন বছরে আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মায়েরা প্রায় তিন কোটি টাকা পেয়েছেন। কিন্তু দু’বছর ধরে আর টাকা আসছে না। তবে আমরা নাম নথিভুক্ত করে রাখছি। টাকা এলেই তা পাঠানো হবে। রঘুনাথগঞ্জ ব্লকের এক আধিকারিক বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বছরে প্রায় চার হাজার গর্ভবতী মহিলা নাম নথিভুক্ত করেন। দু’বছর ধরে তাঁরা কেউই টাকা পাচ্ছেন না। এই ধরনের প্রকল্প চালু হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানে প্রসবের সংখ্যা বেড়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার হঠাৎ করে কেন প্রকল্পে টাকা পাঠানো বন্ধ করল তা বোঝা যাচ্ছে না।”
পাশাপাশি, স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে যে, এই প্রকল্পটি আগে ইন্দিরা গান্ধী মাতৃত্ব সহযোগী যোজনা নামে পরিচিত ছিল। ২০১৭ সালে প্রকল্পটির নাম বদল করা হয়। প্রথমবার গর্ভবতী অবস্থায় মহিলারা এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা যোজনা ও রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্প মিলে মহিলাদের মোট ছ’হাজার টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু দু’টি প্রকল্পেই টাকা আসছে না। এক আধিকারিক বলেন, গর্ভবতী অবস্থায় মহিলারা কাজ করতে পারেন না। উপার্জন না থাকার জন্য অনেকে পুষ্টিকর খাবারও পান না। সেই কারণে এই প্রকল্পটি ইউপিএ সরকার চালু করেছিল। প্রকল্পের নাম বদল করে অর্থ সাহায্য দেওয়া বন্ধ করেছে মোদী সরকার। শক্তিপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা এক মহিলা বলেন, “শুনেছিলাম সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান হলে অনেক অর্থ সাহায্য পাওয়া যায়। কিন্তু আমার মেয়ের চার মাস আগে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসব হয়েছে। এখনও পর্যন্ত এক টাকাও পাইনি।”
উল্লেখ্য, মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার মতো জেলাগুলিতে একসময় সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রসবের হার কম ছিল। বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প চালু করার পর বাড়িতে প্রসবের সংখ্যা কমতে থাকে। এই ধরনের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য স্বাস্থ্যদপ্তর সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার হাত গুটিয়ে নেওয়ায় ক্রমশ চিন্তা বাড়ছে স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্তাদের।