অক্সিজেন মিলছে না হাসপাতালের ভাঁড়ারে। বেসরকারি রিফিলিং সেন্টারগুলির অবস্থাও তথৈবচ। যেখানে সন্ধান মিলছে, সেখানে মাইলের পর মাইল লম্বা লাইন রোগীর পরিজনদের। সঙ্গে খালি সিলিন্ডার। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় বিপর্যস্ত দেশের ছবিটা ছিল এমনই। দিল্লী, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, একের পর এক রাজ্যে মৃত্যুমিছিল। হাহাকার। একমাত্র আশ্বাসের বার্তা শুনিয়েছিল অক্সিজেন কারখানাগুলি। এবার সেই আশ্বাসের প্রতিধ্বনি ফুটে উঠছে উল্টোডাঙার তেলেঙ্গাবাগানে। সমগ্র মণ্ডপ সেজে উঠেছে অক্সিজেনের কারখানা। কেন হঠাৎ এমন থিম-ভাবনা? উদ্যোক্তাদের কথায়, পুজো মানে শুধুই কি আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠা? হয়তো তা আংশিক সত্যি। কিন্তু পুজোর আসল সার্থকতা লুকিয়ে আছে একাত্মতা, সহমর্মিতায়। সকলকে সেই বার্তা দিতেই অক্সিজেনের কারখানা তৈরির ভাবনা। মাতৃ আরাধনার মধ্যে দিয়ে সকলকে জানিয়ে দেওয়া, পাশে আছি। বাঁশ, প্লাইউড, থার্মোকল, কেরোসিন ড্রাম, কাঠ-লোহার কাঠামো দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে খুঁটিনাটি। আশ্বাসের ছোঁয়া রয়েছে প্রতিমাতেও। মায়ের দশ হাতজুড়ে রয়েছে সেই অভয়বাণী।
এখানে শিল্পী সন্দীপ মুখোপাধ্যায়ের কল্পনায় আকার পেয়েছে দেবলোকের কল্পতরু বৃক্ষ পারিজাত। পুজোর সাধারণ সম্পাদক পার্থ মণ্ডল বলেন, “শুনেছি, কল্পতরুর কাছে যা চাওয়া হয়, তাই মেলে। মায়ের সঙ্গেই তাই এবার কল্পতরুর কাছেও আমাদের প্রার্থনা একটাই, কোভিডের অবসান।” মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে পাটকাঠি। সঙ্গে আলোর কারসাজি। একঝলকে দেখলে মনে হবে গোটা মণ্ডপটাই ভাসমান। শিল্পীর কথায়, “কল্পনার জগতের কোনও নির্দিষ্ট রূপ হয় না।” অপর সাধারণ সম্পাদক সুদীপ দলুই জানিয়েছেন, “আমাদের সমস্ত ভাবনা আবর্তিত হচ্ছে মায়ের কাছে প্রার্থনাকে কেন্দ্র করে। প্রতিমাতেও রয়েছে সেই ভাবনার ছোঁয়া। দেবী মূর্তি শান্ত। আশিসদায়িনী।”
পাশাপাশি, মাতৃ আরাধনার মধ্যেই সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধরেছে উল্টোডাঙা যুবকবৃন্দ। নানা পরিস্থিতি, চাপের মধ্যে প্রশ্ন করার সুযোগ কমছে। ক্রমশ এই অভ্যাসটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। চেতনাকে ঝাঁকুনি দিতেই এই ভাবনা। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা নারায়ণ মণ্ডল বলেন, “আমরা একটা অদ্ভুত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে। কমছে আমজনতার মত প্রকাশের সুযোগ। মুক্ত-মনে কিছু বলা, লেখা হলেও সেন্সরের কোপ এড়ানো যাচ্ছে না। স্কুল, কলেজ বন্ধ। জীবন কার্যত খাঁচায় বন্দি। অথচ বলার কিছু নেই।” একচালার সাবেকিয়ানা থেকে বেরিয়ে এসে এবার থিমের ছোঁয়ায় প্রতিমাও পেয়েছে মানবরূপ। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহৃত হয়েছে হ্যারিকেন। সেই আলোতেই কাটবে আঁধার। তেমনই বিশ্বাস শিল্পীদলের।