বাংলায় শারদোৎসব কড়া নাড়তেই বাজারে চাহিদা বেড়েছে রেশম আর প্লাস্টিকের মালার। জোগান দিতে গিয়ে রীতিমতো দিশাহারা ধনেখালির মালাশিল্পীরা। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আতঙ্ক থাকায় মাসখানেক আগেও তেমন চাহিদা ছিল না রেশমমালার। জন্মাষ্টমীর পর থেকেই ধীরে ধীরে চাহিদা বাড়তে শুরু করে। বিশ্বকর্মা পুজোতেও বিক্রি ভালোই হয়েছে। ধনেখালি থানার দশঘড়া বোসপাড়ার রেশমমালা শিল্পীদের এখন নাওয়া-খাওয়ার ফুরসত নেই। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, তারপরেই কালীপুজো। সব মিলিয়ে তুঙ্গে ব্যস্ততা। গত বছর লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন অনেকেই। কলকাতার মহাজনরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। ব্যবসার প্রসার ঘটাতে তাই অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন অনেক শিল্পী ও ব্যবসায়ী। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। সরাসরি ধনেখালির প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মালা পৌঁছে যাচ্ছে পাঞ্জাব, কেরল, ঝাড়খণ্ড, বিহার সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ভিনরাজ্যের ব্যবসায়ীরা কলকাতার মহাজনের উপর ভরসা না রেখে সরাসরি মালা কিনছেন এখান থেকে। সরাসরি বিক্রির সুযোগ তৈরি হওয়ায় চাহিদাও বেড়েছে মালার।
উল্লেখ্য, বিশ্বকর্মা, দুর্গা, কালীপুজোর সময় বিভিন্ন মণ্ডপ ও বাড়িতে সাজসজ্জা লাগে রেশমমালা। এপ্রসঙ্গে ব্যবসায়ী অমিত দাস বলেন, “এলাকার কয়েকশো মানুষ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। সারা বছর আমাদের কাজ থাকে। সরস্বতী পুজোর পর থেকে মাল মজুত করা শুরু হয়। পুজোর সময় অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ হয় এই কাজে। কিন্তু মাঝে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসায় যাতায়াতে কিছু বিধিনিষেধ লাগু হয়েছিল। কলকাতায় যেতেও আমাদের পক্ষে সমস্যা হচ্ছিল। তাই অনলাইনে ব্যবসা শুরু করি। এখন অনলাইনের হাত ধরে বিভিন্ন রাজ্য থেকে অর্ডার আসছে। এখন চাহিদা এতটাই যে, টাকা দিলেও মালা পাঠাতে পারছি না। ১৮ শতাংশ জিএসটি দিয়ে কাঁচামাল কিনতে হয় আমাদের। গ্রামাঞ্চলের ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা জিএসটি দিয়ে কাঁচামাল কিনে বেচাকেনা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। তাই বাধ্য হয়ে মজুরি থেকে বাদ দিতে হয় ওই টাকা। আমাদের পরিবার প্রায় ৩০ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। গ্রামে আমার মতো বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাঁদের সবার অধীনেই কয়েকশো গৃহবধূ কাজ করেন। হাজার হাজার মহিলা এই কাজে যুক্ত হয়ে স্বনির্ভর হয়েছেন। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির মহিলারা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মালা তৈরি করেন। কাজ অনুযায়ী সপ্তাহে ৮০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন তাঁরা। মালা শিল্পে ভর্তুকি সহ ঋণের ব্যবস্থা থাকলে এই ব্যবসাতেই বহু মানুষের কর্মসংস্থান হওয়া সম্ভব।”