এবার বদলাল পরিসংখ্যান। ভবানীপুরের যে এলাকা এতদিন বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল, সেখানেই এবার এগিয়ে গেল তৃণমূল। ৮ ওয়ার্ডের বিধানসভা বিচিত্র এই বিধানসভা কেন্দ্রে ৭০ নম্বর ওয়ার্ডে গণনার শেষে দেখা যায়, সেখান থেকে ১৫৫৬ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ফলাফল বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, এই ওয়ার্ড পুরোপুরি অবাঙালি অধ্যুষিত। ২০১৪ সাল থেকে কোনও লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে এখানে তৃণমূল লিড নিতে পারেনি। পদ্মশিবিরের ভোটবাক্সের বেশিরভাগটাই আসত এই ওয়ার্ড থেকে। কিন্তু সেখানকার ফলাফলও বিজেপিকে উৎসাহ দিতে পারল না।
উল্লেখ্য, ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রকে বলা হয় ‘মিনি ভারতবর্ষ’। কারণ, ভারতজুড়ে যে ধরনের ভাষাভাষি মানুষদের বৈচিত্র দেখা যায়, ঠিক একই ধরনের বৈচিত্র্য দেখতে পাওয়া যায় ভবানীপুরেও। এখানে বাঙালি হিন্দু ভোটারদের হার ৪২ শতাংশ। অবাঙালি হিন্দু রয়েছেন ৩৪ শতাংশ। এবং মুসলিম অর্থাৎ সংখ্যালঘু ভোটারদের হার ২৪ শতাংশ। গত ২০১৪ সাল থেকেই বিজেপি টানা লিড নিয়ে এসেছে এমন একটি মাত্র ওয়ার্ড রয়েছে। তা হল ৭০ নম্বর ওয়ার্ড। ২০১৪ সাল থেকে এই একটি মাত্র ওয়ার্ডে কখনই কোনও নির্বাচনে পিছিয়ে থাকেনি বিজেপি। এমনকী, গত বিধানসভা নির্বাচনেও এখান থেকে বিজেপি এগিয়ে ছিল। কিন্তু উপনির্বাচনে মমতা এখানে প্রার্থী হতেই সব হিসেব-নিকেশ কার্যত উল্টে গেল।
এছাড়াও বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড রয়েছে যেগুলিকে ঘিরে আশায় বুক বেঁধেছিল বিজেপি। সেই ওয়ার্ডগুলিও হতাশ করেছে তাদের। বড় ধাক্কা দিয়েছে ভবানীপুরের ৬৩ নম্বর, ৭৪ নম্বর ও ৭১ নম্বর ওয়ার্ড। ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডে অবাঙালি আধিপত্য বেশি। মোট ভোটারদের মধ্যে ৫০ শতাংশ এই ওয়ার্ডে অবাঙালি। এখানে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে মাত্র একবার ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে লিড নিতে পেরেছিল বিজেপি। সেটা ২০১৬ সালে। তার পর যতবার ভোট এসেছে, ততবার বিজেপিই এগিয়ে থেকেছে। কিন্তু এ বারও সেই ট্রেন্ড উল্টে গেল। ভবানীপুরের ৭১ নম্বর ওয়ার্ডে লোকসভা ভোটে বিজেপি এগিয়ে থাকত। কিন্তু সেখানেও এ বার লিড নিয়েছেন মমতা। অর্থাৎ যে যে কেন্দ্রগুলি ঘিরে বিজেপি জয়ের আশা করেছিল, সেই ওয়ার্ডগুলিই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের থেকে।