একুশের ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই বিজেপির অন্দরে শুরু হয়েছে গোষ্ঠীকোন্দল, দোষারোপের পালা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ক্ষোভ উগরে দিয়ে দলত্যাগ করছেন নেতা-কর্মীরা। এরই মধ্যে আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকে হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের দল ছাড়ার জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে লকেট বৈঠক করেছেন বলেই শোনা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁকে দলে আটকে রাখতে মরিয়া গেরুয়া শিবির। লকেট যাতে কোনও ভাবেই দল না ছাড়েন, সেটা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মঙ্গলবার বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা দিল্লীতে তাঁর বাসভবনে লকেটের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। যদিও সেই বৈঠকের বিষয়বস্তু অন্য কিছু ছিল বলেই দাবি করেছেন লকেট।
তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাকে উত্তরাখণ্ডের বিধানসভা নির্বাচনে সহ-পর্যবেক্ষক করা হয়েছে। সেখানে দু’দিন সফর করে সোমবার সকালেই আমি দিল্লী ফিরেছি। নাড্ডাজি ডেকে পাঠিয়েছিলেন উত্তরাখণ্ড নিয়ে আলোচনার জন্য।’ নাড্ডার সঙ্গে বৈঠকে তাঁর দল ছাড়ার প্রসঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি বলেও দাবি করেছেন লকেট। উলটে এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘নাড্ডাজি তো জানতেনই না যে এই ধরনের কোনও খবর রটেছে। আমিই বললাম। শুনে তো উনি অবাকই হয়েছেন। বুধবার যোশীজির সঙ্গে আবার আমাদের উত্তরাখণ্ড নিয়ে বৈঠক রয়েছে। সেই সব বিষয়েই কথা হয়েছে।’ তবে লকেট স্বীকার না করলেও নাড্ডা যে শুধু উত্তরাখণ্ড নিয়ে আলোচনার জন্য লকেটকে ডেকেছিলেন, সে কথা মানতে নারাজ ওয়াকিবহাল মহল।
কারণ, বিজেপির তরফে উত্তরাখণ্ডের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক করা হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীকে। পর্যবেক্ষককে ছাড়াই সর্বভারতীয় সভাপতি সে রাজ্য নিয়ে শুধুমাত্র সহ-পর্যবেক্ষকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, এমনটা বিজেপিতে সচরাচর দেখা যায় না। লকেটের সঙ্গে যে নাড্ডা বাংলার বিষয়েই আলোচনা করেছেন তার ইঙ্গিত লকেটের কথাতেই মিলেছে। তিনি বলেছেন, ‘নতুন রাজ্য সভাপতির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে বলেই নাড্ডাজিকে জানিয়েছি।’ তাঁর সমস্ত কথা নাড্ডাজি মন দিয়ে শুনেছেন বলেও মন্তব্য করেছেন হুগলির সাংসদ। অন্যদিকে, লকেটকে যে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব গুরুত্ব দিচ্ছে নাড্ডার সঙ্গে বৈঠক থেকে তার প্রমাণও মিলেছে। রাজ্যে দলের ভাঙন যাতে আর বিস্তৃত না হয় সেদিকে কড়া নজর রেখেছে মরিয়া গেরুয়া শিবির।