সম্প্রতি চিত্রশিল্পী সনাতন দিন্দার ছবি নিয়ে শুরু হয়েছ তুমুল বিতর্ক। নিজের ভার্চুয়াল ওয়াল থেকে বিতর্কিত ছবিটি মুছে ফেলার পরও লাগাতার কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে বিশিষ্ট শিল্পীকে। শুধু তাই নয়, ফোন করে রীতিমতো খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। ঘটনায় শেষমেশ লালবাজারের দ্বারস্থ হয়েছেন সনাতন দিন্দা। প্রসঙ্গত, ঘটনার সূত্রপাত গত ২রা সেপ্টেম্বর। ফেসবুকে নিজের হাতে আঁকা একটি ছবি পোস্ট করেন সনাতন দিন্দা। চারকোল ড্রাই প্যাস্টেলে আঁকা সাদা-কালো ছবিতে একটি নারীর মুখ ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি। যেখানে মেয়েটির মাথা ঢাকা ওড়নায়। মুখেও আবরণ। সে আবরণে লেগে রয়েছে ঠোঁটের উঠে যাওয়া লিপস্টিক। ছবিটির ক্যাপশনে শিল্পী লিখেছিলেন, “মা আসছেন।” ব্যস, এই ছবি ঘিরেই শুরু হয়ে যায় তীব্র বিতর্ক। নেটিজেনদের একাংশের দাবি, দেবী দুর্গাকে হিজাব পরানো হয়েছে এই ছবিতে। অনেকে আবার প্রশ্ন তোলেন, এই রূপে মা দুর্গাকে দেখিয়ে কী বোঝাতে চাইছেন তিনি? অনেকেরই দাবি, এই ছবি হিন্দুদের ভাবাবেগে আঘাত করেছে।
এরপর তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ শিল্পী শেষমেশ ছবিটি মুছেই ফেলেন। নতুন একটি পোস্টে সকলের কাছে ক্ষমাও চান তিনি। লেখেন, “আমার করা ছবিটা ফেসবুক থেকে ডিলিট করতে বাধ্য হলাম। আমাকে যেভাবে, যে ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন থ্রেট কল আসছে, সেটা সামলানো মুশকিল হচ্ছে। আমার ছবি দেখে যাদের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে, তাঁদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।” কিন্তু এরপরও আক্রমণের ঝাঁজ কমেনি। অত্যন্ত আপত্তিকর ও কুরুচিকর ভাষায় কটাক্ষ করা হয় সনাতন দিন্দাকে। এমনকী, ফোন করে খুনের হুমকিও দেওয়া হয় তাঁকে। আর ঠিক এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন শিল্পী। তিনি বলেন, “কারও ভাবাবেগে আঘাত লেগে থাকলে, তার জন্য তো ক্ষমা চেয়েছি। তারপরও কেন এমন ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে? আমি আমার ছবি দিয়ে নারীশক্তির কথাই বলতে চেয়েছি। যে কারণে ত্রিনয়ন রয়েছে তার। কোনও মেয়ে কি নিজের মতো করে নিজেকে দেবী বলে ভাবতে পারে না? সেই ভাবনা থেকেই তো এই ছবি। আমি তো একবারও বলিনি ওটা হিজাব কিংবা ঘোমটা। কিংবা আমি দেবী দুর্গাকে এঁকেছি। মানুষ যদি সেভাবে ব্যাখ্যা করে, তাহলে আমার অপরাধ কোথায়?”
পাশাপাশি তিনি আরও জানান, “আসলে আমার ছবিটা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছিল। আমি রাজনীতির লোক নই। তাই চাইনি এটা নিয়ে কোনওরকম রাজনীতি হোক। সেই জন্যই মুছে ফেলেছি।” কিন্তু তারপরও লাগাতার হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। আর সেই কারণেই লালবাজারে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। শিল্পীর অনুরোধ একটাই, তাঁর ছবি অপছন্দ হলে সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু ভুলভাবে তা ব্যাখ্যা করে যেভাবে নোংরা রাজনীতির চেষ্টা করা হচ্ছে, তা যেন বন্ধ হয় শীঘ্রই।