স্বভাবতই প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে গেছিল বাংলার ভোট বৈতরণী পার হতেই। আস্থার ফুলঝুড়ি ছুটিয়েছিলেন ছোট বড় সব বিজেপি নেতাই। প্রচার চলে, কেন্দ্রের কিষান সম্মান নিধি নিয়ে। যদিও প্রকল্পের পরিসংখ্যানই স্পষ্ট করে দেয় বিজেপি নেতাদের কথায় আর কাজে কতটা তফাৎ। জেলার ১৮টি ব্লকের প্রায় দু’লক্ষ চাষি কেন্দ্রের ওই প্রকল্পের সুবিধা পেতে আবেদন করলেও তা যাচাই করা হয়নি। শুধুমাত্র পোর্টালেই আবেদনকারীদের নাম রয়ে গিয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ আবেদনকারীরা। তাঁরা বলেন, কেন্দ্রের কিষান সম্মান নিধির সুবিধা পেতে বহুদিন আগেই আবেদন জমা দিয়েছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, কেন্দ্রের তরফে ওই আবেদন মঞ্জুর হয়নি। তাই প্রকল্পের সুবিধা মিলছে না। যদিও কৃষকবন্ধু প্রকল্পের টাকা নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে।
জেলা কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতেও তিন লক্ষ ৩৪ হাজার ৪১০ জন চাষিকে কৃষকবন্ধু প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন করে অনেকেই আবেদন জমা দিয়েছেন। তাঁরাও যাতে দ্রুত সুবিধা পান, তারজন্য বিভিন্ন ব্লক কৃষিদপ্তরে পুরোদমে কাজ চলছে। জানা গিয়েছে, দুই একরের মতো জমি থাকলে কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে তিনবার দু’হাজার টাকা করে পাবেন আবেদনকারীরা। কিন্তু জেলার অধিকাংশ চাষির ওই পরিমাণ জমি নেই। তাই অনেকেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পেতে আবেদন করতে পারছেন না। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই প্রকল্পটি চালু করেছিলেন। তবে এই প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রচার হয়নি। তাই প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় বহু চাষি প্রকল্প সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়।
নদীয়া প্রধানত কৃষিপ্রধান জেলা। ধান, পাট, সর্ষে, ভুট্টা চাষের পাশাপাশি উর্বর মাটিতে কলা, বাদাম, আলু চাষ হয়। এছাড়া উল্লেখযোগ্যভাবে চাষ হচ্ছে ফুলও। কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষকবন্ধু প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে দু’বার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। প্রকল্পের সুবিধা পেতে আগে চাষিদের নিজেদের নামে জমির রেকর্ড বা পরচা থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু এখন এই প্রক্রিয়ায় আরও সরলীকরণ করা হয়েছে। যেসব চাষি নিজেদের নামে এখনও জমির রেকর্ড কিংবা মিউটেশন করাতে পারেননি, তাঁরা সাদা কাগজে স্বীকারোক্তির মাধ্যমে এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন। এছাড়া বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো এই প্রকল্পের পাঁচ হাজার টাকার সহায়তা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এতে খুশি জেলার চাষিরা। যদিও কৃষি প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট জেলার চাষিদের একাংশ।