চলতি বছরের মধ্যে কোভিড টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা আদৌ যাবে কি? এমন সংশয়ের মধ্যেই কাটাছেঁড়ার মধ্যেই সামনে এল উদ্বেগজনক আর একটি পরিসংখ্যান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের সমীক্ষা জানাচ্ছে, গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে ভারতের তিরিশ লক্ষেরও বেশি শিশু ডিটিপি-১ প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ পায়নি। গোটা বিশ্বে ডিটিপি-১ না পাওয়া শিশুর সংখ্যাবৃদ্ধির হারে ভারতই এক নম্বরে। ডিটিপি-১, অর্থাৎ ডিপথেরিয়া, টিটেনাস এবং পার্টুসিস (হুপিং কাশি)-এর আগাম প্রতিরোধক টিকার প্রথম ডোজ। ২০১৯ সালে ভারতে ডিটিপি-১ না পাওয়া শিশুর সংখ্যা ছিল ১৪ লক্ষ ৩ হাজার। ২০২০-তে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ লক্ষ ৩৮ হাজার। এই বৃদ্ধির হারে ভারতই বিশ্বে পয়লা নম্বরে। ডিটিপি-৩ পাওয়ার হারও ৯১ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৮৫ শতাংশ। হু এবং ইউনিসেফ একযোগে এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে বৃহস্পতিবার।
পাল্টা ভারত সরকারের দাবি, স্বাস্থ্য মন্ত্রক কোভিড মোকাবিলার পাশাপাশি সার্বিক টিকাকরণ কর্মসূচি (ইউআইপি)-সহ সব রকম অ-কোভিড জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবাই সমান তালে চালিয়ে যেতে দায়বদ্ধ। যে কারণে ২০২১-এর প্রথম ত্রৈমাসিকে ডিটিপি-৩ দেওয়ার ৯৯ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া গিয়েছে। তবে হু-র রিপোর্টকে অসত্য বলে দাবি করলেও ২০২০-র ডিটিপি-১ এবং ডিটিপি-৩ দান সংক্রান্ত বিকল্প পরিসংখ্যান কিন্তু এখনও অবধি দেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রক। প্রসঙ্গত, কোভিড পরিস্থিতির চাপে শিশুদের টিকাকরণ কর্মসূচী ব্যাহত হয়েছে পৃথিবী জুড়েই। সমীক্ষা বলছে, ২০২০-তে প্রাথমিক প্রতিষেধক না পাওয়া শিশুর সংখ্যা বিশ্বে প্রায় দু’কোটি ৩০ লক্ষ। কোনও প্রতিষেধকই না পাওয়া শিশুর সংখ্যা ১ কোটি ৭০ লক্ষ।
সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৯-এর তুলনায় ২০২০-তে ডিটিপি-১ প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ় না পাওয়ার শিশুর সংখ্যা সারা পৃথিবীতে বেড়েছে প্রায় ৩৫ লক্ষ, হামের টিকা না পাওয়া শিশুর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৩০ লক্ষ। হু-ইউনিসেফ বলেছে, “মধ্য আয়ের দেশগুলিতে অসুরক্ষিত শিশুর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। ভারত তার মধ্যে অন্যতম।” হু-এর ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস এও বলেছেন, “একাধিক দেশই কোভিডের টিকা নিয়ে চিন্তিত, এ দিকে অন্যান্য টিকাকরণ পিছিয়ে যাচ্ছে। তাতে শিশুদের হাম, পোলিয়ো, মেনিনজাইটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। কোভিডে বিপর্যস্ত জনজীবনে অন্যান্য রোগের প্রকোপ যদি বাড়ে, সেটা বিধ্বংসী হবে।”
উল্লেখ্য, করোনাজনিত নিয়ন্ত্রণবিধি মৌলিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় আঘাত হেনেছে বিশ্ব জুড়েই। যাতায়াতের সমস্যা, পরিবহণের অপ্রতুলতা, প্রচারের ঘাটতি, ঘরে থাকার ঝোঁক— এ সবই শিশুদের টিকাকরণে প্রভাব ফেলেছে। ইউনিসেফের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর হেনরিয়েটা ফোরে বলেছেন, “কোভিড এবং তজ্জনিত পরিকাঠামো বিপর্যয় আমাদের পায়ের তলার মাটি সরিয়ে নিচ্ছে। সেটা কোনও ভাবেই হতে দেওয়া যায় না। শুধু কোভিডের টিকা নয়, সব রকম টিকার বণ্টনেই বৈষম্য ছিল, আছে। এটা চলতে দেওয়া
উচিত নয়।”