এ যেন মগের মুলুক! এবার প্রকাশ্যে এল বিজেপির ‘জালিয়াতি’র কথা। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে ‘অত্যাচারিতে’র সংখ্যা বাড়িয়ে দেখাতে নাতির পৈতের অনুষ্ঠানে আসা প্রৌঢ়কেও কলকাতায় ধরে নিয়ে গেল বিজেপি! উপনয়নের অনুষ্ঠান বাড়ি থেকেই তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
মঙ্গলবার নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকার প্রায় ৫০ জনকে নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে নালিশ জানাতে গিয়েছিল বিজেপি। হিংসায় শিকার বলে যাঁদের বাসে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হল, তাঁদের অধিকাংশই নিরীহ এবং প্রায় সকলেই বাড়িতে আছেন। নন্দীগ্রাম-২ব্লকের আমদাবাদ-২গ্রাম পঞ্চায়েতের টাকাপুরা গ্রামের আশিস পণ্ডা নাতির উপনয়ন উপলক্ষে পাঁশকুড়া বাজারে মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার সেখান থেকেই তাঁকে মানবাধিকার কমিশনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
আশিসবাবুর ছেলে দেবজ্যোতি বলেন, বাবা পাঁশকুড়ায় ভাগ্নের উপনয়ন অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে কলকাতায় গিয়েছেন বলে শুনেছি। টাকাপুরা গ্রামের বাসিন্দা ভূদেব খাটুয়া বলেন, সোমবার আমি আশিস পাণ্ডার সঙ্গে কথা বলেছি। নাতির উপনয়ন অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবার বাড়িতে আসবেন বলে আমাকে জানিয়েছিলেন। তাঁকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শুনে অবাক হয়ে যাচ্ছি।
গতকাল সকালে টাকাপুরা শিবমন্দিরের কাছে নিজের গ্যারেজে কাজে ব্যস্ত ছিলেন শিবপ্রসাদ গিরি। তাঁর গ্যারেজে বাইক সার্ভিস করাতে যান আমদাবাদ-২ অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি শেখ কাজেহার। তার কিছুক্ষণ পরই ভোট পরবর্তী হিংসার শিকার হিসেবে তুলে ধরার জন্য বিজেপি নেতৃত্ব শিবপ্রসাদবাবুকে বাসে চাপিয়ে কলকাতায় নিয়ে যায়। শেখ কাজেহার বলেন, বিজেপি যাদের কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিল, তাঁরা প্রত্যেকেই বাড়িতে থাকেন। এই ঘটনায় বিজেপি নিজেদের চরিত্র নন্দীগ্রামবাসীর কাছে আরও স্পষ্ট করে দিল।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে নালিশ জানাতে গিয়েছিলেন টাকাপুর গ্রামের রানু বারিক। রানুদেবী সম্পর্কে আমদাবাদ-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান সবিতা বারিকের জা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভোটের ফল প্রকাশের পর বিজেপির লোকজন রানুদেবীর বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। রানুদেবী কিংবা তাঁর স্বামী একদিনের জন্যও ঘরছাড়া হননি। ওই দম্পতি হুমকির মুখেও পড়েননি। খোদ রানুদেবীর স্বামী বলেন, ভোটের পর আমার বাড়ির টালি ভেঙেছিল। তবে, আমরা ঘরছাড়া হইনি।
আবার, টাকাপুরা উত্তরপল্লির বাসিন্দা গৌরাঙ্গ দাস একজন যাত্রাশিল্পী। ভোটের পর থেকেই বাড়িতে আছেন তিনি। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব ওই যাত্রাশিল্পীকেও অত্যাচারের গল্প শোনাতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে হাজির করেছিল। গৌরাঙ্গবাবুর ছেলে সুরপতি দাস বলেন, ভোটের পর বাবা কয়েক দিন বাড়ির বাইরে ছিলেন ঠিকই। কিন্তু তারপর বাড়িতেই আছেন।