২৬ শে জুন, ১৯৯৬। ইউরো সেমিফাইনালে তাঁদের মুখোমুখি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী জার্মানি। ম্যাচ জিততে বদ্ধপরিকর ইংল্যান্ড টিম। কিন্তু এক্সট্রা টাইমেও ম্যাচের ফলাফল আসেনি। ফলত শুরু হল টাইব্রেকার। সবাই স্কোর করেছেন ঠিকই, কিন্তু গোটা স্টেডিয়াম তাকিয়ে একজনের দিকেই। পেনাল্টি স্পটে বল বসিয়েছেন, প্রবল চাপে মাথা কাজ করছে না। চাপের বশে সেই পেনাল্টি মিস করে বসলেন গ্যারেথ সাউথগেট। ফাইনালে পৌঁছে গেল জার্মানি এবং তারপর ইউরো ট্রফি নিয়েই তাঁরা দেশে ফিরলো। কোনোদিনও ইউরো না জেতা ইংল্যান্ড সেই হারের ক্ষত আজও ভুলতে পারে নি। ভুলতে পারেননি আরও একজন। তিনি সেদিনের ‘খলনায়ক’ গ্যারেথ সাউথগেট।
কাট টু, ২৯ শে জুন, ২০২১। গতকাল সেই ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামেই ইউরো কাপেরই নকআউট ম্যাচে মুখোমুখি হল ইংল্যান্ড-জার্মানি। মাঝে পেরিয়ে গিয়েছে দীর্ঘ ২৫ বছর পর। সেদিনের সেই ভিলেন ফুটবলার আজ ইংল্যান্ডের ডাগআউটে, কোচ হিসাবে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া ১৯৯৬ এর সেই ক্ষত বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে সাউথগেটকে, ঠিক যেভাবে ‘চক দে ইন্ডিয়া’-র কবীর খানকে মনে করিয়ে দেওয়া হত ৭ বছর আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফাইনালে পেনাল্টি মিসের কথা।
কিন্তু ফুটবল দেবতা হয়তো অন্যকিছুই ভেবে রেখেছিলেন। তাই ফুটবলার হিসাবে গ্যারেথ সাউথগেট যা পারেননি, প্রশিক্ষক হিসাবে সেই কাজটাই করার সাহস জুগিয়ে গিয়েছেন হ্যারি কেনের ইংল্যান্ডকে। গতকাল ইউরোর প্রি কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই জার্মানির বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দিলেন রহিম স্টার্লিংরা। ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েম্বলির মাঠেই শেষ বার জার্মানিকে (সেই সময় পূর্ব জার্মানি) কোনও নক আউট পর্বে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। মঙ্গলবার ৪০ হাজার দর্শকের সামনে সেই ওয়েম্বলির মাঠেই ফের জার্মান রক্ষণ ভাঙলেন হ্যারি কেনরা। গ্রুপ পর্বে একটিও গোল হজম করেনি ইংল্যান্ড। জার্মানির বিরুদ্ধে যা সাহস জুগিয়েছিল সাউথগেটকে।
ম্যাচ জিতে সাউথগেট বলেন, “এক অসাধারণ মুহূর্ত। দেশের মানুষকে এমনই আনন্দের বিকেল উপহার দিতে চেয়েছিলাম। দলের প্রতিটা ফুটবলার তাঁদের কাজ নিপুণ ভাবে করেছে। মাঠে হয়তো মাত্র ৪০ হাজার দর্শক ছিলেন, তবে তাঁরাই গোটা স্টেডিয়ামে দারুণ পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমরা দারুণ খেলেছি, এই জয়টা আমাদের প্রাপ্য।” তবে এর পাশাপাশি সাউথগেট মনে করেন, জার্মানির বিরুদ্ধে এই জয় বিফলে যাবে যদি কোয়ার্টার ফাইনালে জিততে না পারে ইংল্যান্ড। তাই এখনই আনন্দে গা ভাসাতে রাজি নন সাউথগেট।