মধুচন্দ্রিমা পর্ব কি তবে শেষ? ভোটে জিতেও কি দলের সঙ্গে ভাঙনের পথে সম্পর্ক? কানাঘুষো এমনটাই শোনা যাচ্ছে মুকুল রায় এবং বিজেপির একে অপরের প্রতি সাম্প্রতিক অবস্থান নিয়ে। সল্টলেকের বাড়িতে ঘন ঘন অনুগামীদের নিয়ে বৈঠক করছেন এই বিধায়ক। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় রোজই অনুগামীরা দেখা করতে আসছেন তাঁর সঙ্গে। সে সব দেখাশোনা বা বৈঠক সম্পর্কে সকলেরই মুখে কুলুপ। কিন্তু যেটুকু নির্যাস চুঁইয়ে বাইরে আসছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে, মুকুল-বিজেপি দূরত্ব ক্রমশ বাড়ছে। যা থেকে প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি পদ্মফুল ছেড়ে ফের একবার জোড়াফুলের পথে?
শুভেন্দু বা রাজীবের মতো মুকুল অবশ্য ভোটের আগের ‘দলবদলু’-দের মধ্যে পড়েন না। তিনি অনেক আগেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি জাতীয় স্তরের পদাধিকারীও বটে। কিন্তু প্রথম থেকেই বিজেপি-র ‘সংস্কৃতি’-র সঙ্গে তাঁর সে ভাবে মিলমিশ হয়নি। তৃণমূলে তিনি যতটা খোলামেলা ছিলেন, বিজেপিতে গিয়ে সেই জায়গা পাননি। দলের অন্দরে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর শীতল সম্পর্কের কথাও কারও অজানা নয়। তবে এতদিন তা কোনওরকমে চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছিল।
কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় ভোট মিটতেই। সম্প্রতি মুকুল বাবুর স্ত্রী-র অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে সেই ঠাণ্ডা যুদ্ধ লোকসম্মুখে এসে পড়েছে। বিষয়টা ঢেকে রাখার চেষ্টা করেননি মুকুল নিজেও। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুকুলপুত্র শুভ্রাংশুর ফেসবুক পোস্ট এবং প্রকাশ্যে বিভিন্ন বক্তব্য। যা ভোটে হারের জন্য সরাসরি বিজেপি-কে কাঠগড়ায় তুলেছে। ভোটে মুকুল জিতলেও শুভ্রাংশু হেরে গিয়েছেন। তার পর থেকেই তিনি প্রথমে ঘনিষ্ঠমহলে এবং পরে প্রকাশ্যে নিজের বর্তমান দলের সমালোচনা করতে শুরু করেছেন।
আর সেই আবহের মধ্যেই ভোট-পরবর্তী সময়ে ব্যক্তিগত স্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বের তরফে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের প্রতি এখনও যে মনোযোগ দেখা গিয়েছে, তাতে খুশি খোদ মুকুল রায়ও। ওঁর স্ত্রীর অসুস্থতার খবর পেয়েই হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন অভিষেক। এমনকি ব্যক্তিগত স্তরে খোঁজ খবর নিয়েছিলেন দলনেত্রী মমতাও। যা মুকুলকে অভিভূত করেছে। তাই এখন দেখার, শেষ অবধি মুকুল রায় কি করেন? বিজেপিতেই থাকবেন নাকি দলবদল করে ফের পুরোনো দলে ফিরে আসার কথা ভাববেন? শেষ অবধি নাটক বাকি, কারণ কথায় আছে, রাজনীতিতে না আঁচালে বিশ্বাস নেই।