বাংলায় একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে রুখে দেওয়ার পরই সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্ভাব্য গতিবিধি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। যার ফলস্বরূপ দিন কয়েক আগেই টুইটারে দেখা গিয়েছিল নতুন ট্রেন্ডিং — হ্যাশট্যাগ ইন্ডিয়া ওয়ান্টস মমতাদি! অর্থাৎ ভারত মমতাদিকেই চায়। এবার নবান্নে মমতার সঙ্গে দেখা করে কার্যত সেই আর্জিই জানালেন কৃষক আন্দোলনের নেতা রাকেশ টিকায়েতরা। বুধবার টিকায়েত বলেন, ‘মমতাজি বাংলাকে বিজেপির হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। এবার দিল্লীতে বিজেপিকে হারিয়ে দেশকে বাঁচাতে হবে।’
প্রসঙ্গত, প্রথম থেকেই কেন্দ্রের ৩ কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দিল্লী সীমান্তে চলা কৃষক বিক্ষোভকে সমর্থন করে এসেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডেরেক ও’ব্রায়েন, মহুয়া মৈত্রদের মতো সাংসদদের টিম পাঠানো থেকে শুরু করে দিল্লির উপকণ্ঠে কৃষক জমায়েতের উদ্দেশ্যে মমতার টেলিফোন বক্তৃতার পাশাপাশি রাজ্যে বিধানসভায় এই প্রস্তাবও পাশ করানো হয় রাজ্যে ওই তিন কৃষি আইন বাস্তবায়িত হবে না। যার প্রতিদান দিয়েছেন দিল্লীর কৃষক নেতারাও। পাল্টা সৌজন্য দেখিয়ে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে দিল্লী থেকে এসে বিজেপি বিরোধী প্রচার করে গিয়েছেন তাঁরা। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামেও প্রচার করতে দেখা গিয়েছিল তাঁদের।
বুধবার সর্বভারতীয় কিষান সমন্বয় মঞ্চের নেতাদের সামনে মমতা বলেন, ‘গায়ের জোরে আইন পাশ করিয়ে কৃষকদের উপর সব কিছু চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যার ফল ভুগছে গোটা দেশ। কৃষিক্ষেত্র, শিল্প কেন্দ্র ভুখা হয়ে পড়েছে।’ পাশাপাশি স্মৃতির সরণি বেয়ে ১৪ বছর আগে ফিরে গিয়ে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বাংলায় কৃষকের জমি রক্ষার আন্দোলনে তাঁর ঘাম ঝরানোর কথাও। সিঙ্গুর আন্দোলনে তাঁর ২৬ দিন অনশনের কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘সেই আন্দোলনের ফলে জমি অধিগ্রহণের নীতির ক্ষেত্রে বড়সড় বদল হয়েছিল। কৃষকদের থেকে যাতে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা না করা হয় সে ব্যাপারে বাংলাই মডেল সারা দেশের সামনে।’
উল্লেখ্য, বাংলার ভোটে বিজেপিকে রুখে দেওয়ার পর অনেকেই বলছেন, বিজেপি বিরোধী মুখ হিসেবে সারা দেশে মমতা নিজেকে অনেকটা উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়েছেন। তাঁদের অনেকের মতে, ২০২৪-এর ভোটে মমতাকে কেন্দ্র করেই বিজেপি বিরোধী দলগুলি এক জায়গায় আসতে পারে। এদিন নবান্নে বৈঠকের পর কৃষক নেতারাও সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন। তাঁদের তরফে টিকায়েত বলেন, বিজেপিকে ভোট দেবেন না। বিজেপি দেশের ক্ষতি হয়েছে। মমতা দিদি বাংলাকে বাঁচিয়ে নিয়েছেন। এবার দেশ বাঁচানোর পালা। বিজেপি থাকলে দেশ থাকবে না। বিজেপি না থাকলে দেশ বাঁচবে।