বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই গেরুয়া শিবিরে শুরু হয়ে গিয়েছে দোষারোপের পালা। বারবারই সামনে এসে পড়ছে পদ্মবনের অন্তর্কলহ। পাশাপাশি, শুরু হয়েছে দল ছাড়ার হিড়িকও। এরই মধ্যে এবার ঘরছাড়াদের বাড়ি ফেরানো নিয়ে বৈঠকের পরেই, দলের জেলা (সদর) কার্যালয়ে কিছু কর্মী-সমর্থকের ঘেরাও-বিক্ষোভের মুখে পড়লেন বিজেপির দুই নেতা। জেলা নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাঁরা এক মাসের উপরে ঘরছাড়া। তাঁদের বাড়ি ফেরানো, পরিবারের পাশে থাকা বা ভাল খাবার দিতে ব্যর্থ বর্ধমান শহরের নেতারা। সে কারণেই রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
দলের জেলা সাংগঠনিক সহ-সভাপতি প্রবাল রায়ের দাবি, ‘প্রায় এক মাস ধরে কর্মী-সমর্থকেরা ঘরছাড়া। লুটপাট থেকে মহিলাদের নির্যাতন, নানা অত্যাচার হয়েছে। তাঁদের ক্ষোভের কথাই আমাদের জানাচ্ছিলেন।’ বিজেপির একাংশের দাবি, দলের দফতরে এই ঘটনার পিছনে প্রাক্তন এক যুব নেতার হাত রয়েছে। তাঁর উস্কানিতে বর্ধমান দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী সন্দীপ নন্দী ও এই বিধানসভার আহ্বায়ক কল্লোল নন্দনকে বৈঠক শেষে ঘেরাও করা হয়। বিজেপির এক রাজ্য নেতার দাবি, ‘ওই যুব নেতার বিরুদ্ধে আগেও দলবিরোধী কাজের রিপোর্ট জমা পড়েছিল। সে জন্য তাঁকে নির্বাচনের কাজ থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। জেলা কমিটির কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে।’
বিজেপি সূত্রে জানা যায়, দলের জেলা (বর্ধমান সদর) সভাপতি অভিজিৎ তা অসুস্থতার জন্য ছুটিতে রয়েছেন। তাঁর বদলে কার্যভার সামলাচ্ছেন সহ-সভাপতি প্রবালবাবু। তিনি মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ বর্ধমানের ঘোরদৌড়চটির কার্যালয়ে ন’টি বিধানসভার প্রার্থী, আহ্বায়ক, সহ-আহ্বায়ক, মণ্ডল সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক ডাকেন। ঘরছাড়াদের প্রকৃত অবস্থা জানা ও তাঁদের পরিবার কেমন আছে, সে কথা জানতেই বৈঠক। আর তা শেষ হওয়ার পরেই প্রায় ৩০ জন বিজেপি নেতা সন্দীপ ও কল্লোলকে একটি ঘরে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, দলীয় কার্যালয়ে নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে।
ওই দুই নেতা তাঁদের জানান, বাড়ি ফেরানোর জন্য তাঁরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরাও ফিরবেন বলে আশ্বাস দেন। তবে এরই মধ্যে চিৎকার-চেঁচামেচি বেধে যায়। কার্যালয়ের সামনে জিটি রোডে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। পুলিশের একটি টহলদার গাড়িও দাঁড়িয়ে পড়ে। ঘটনা নিয়ে সন্দীপের সাফাই, ‘এক মাস ধরে কর্মী-সমর্থকেরা ঘরছাড়া। পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ জন্মেছে। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।’ এদিকে দলের কার্যালয়ের সামনে পাওনাদারদের ‘ক্ষোভে’র মুখে পড়েন খণ্ডঘোষের বিজেপি প্রার্থী বিজন মণ্ডল। নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরেও ডেকরেটর-সহ বিভিন্ন পাওনাদারের টাকা মেটানো হয়নি বলে অভিযোগ।