গত বুধবার উড়িষ্যার বালাসোরে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’। আর তার জেরেই প্রায় তছনছ হয়ে গিয়েছে দীঘা। ভেঙে গিয়েছে মেরিন ড্রাইভ। মাত্র কয়েক বছর আগে তৈরি মেরিন ড্রাইভ কীভাবে এত ক্ষতিগ্রস্ত হল, আগেই রিভিউ মিটিংয়ে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন সেচ দফতরের কাজেও। ক্ষমতায় আসার পর দীঘার যে সৌন্দর্যায়নে মন দিয়েছিলেন তিনি, যশের দাপটে তার অনেক কিছুই ভেঙে যাওয়ায় এবার ফের সরব হলেন তিনি। ‘পেভার ব্লক’ কী ভাবে খুলে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তাঁর কথায়, ‘যারা করেছে তাদের দোষ, তদন্ত হওয়া উচিৎ।’ আর এই অভিযোগ যে কার্যত অধিকারী পরিবারের দিকে যাচ্ছে, তেমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের। কারণ, দীঘা উন্নয়ন পর্ষদের দায়িত্বে ছিলেন শিশির অধিকারী। এ ছাড়া, মমতা বারবার অভিযোগ করেছেন তাঁকে পূর্ব মেদিনীপুরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাই মমতা তদন্তের কথা বলে আরও একবার অভিযোগ শানালেন বলেই মনে করা হচ্ছে। অন্য দিকে, ১২ তারিখে ফের আসছে ভরা কোটাল। যশের বিপদ কেটে যেতেই ফের রাজ্যের আধিকারিকদের সেই বিষয়ে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
শুধু তাই নয়। যশের আগে গত বছর বাংলায় আঘাত হেনেছিল আমফান। সেই ঝড়ে বহু গাছ পড়ে গিয়েছিল। সেই সব কাজ কোথায় গেল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। নবান্ন থেকে তিনি বলেন, ‘অনেক গাছ কাটা হয়েছিল, সে গুলো কোথায় গেল? বলেছিলাম গাছ ফেলে নদী ভাঙন আটকানো যেতে পারে।’ মমতার অভিযোগ, সেই গাছ কখনও বন দফতর তুলে নিয়ে যায়, কখনও পুরসভা নিয়ে যায়, কখনও সেচ দফতর নিয়ে যায়। এর কোনও হিসেব নেই।
এরপরেই তিনদিনের মধ্যে সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট চান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমফানে পড়ে যাওয়া গাছগুলো কোথায় গেল? ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, তিন দিনের মধ্যে সেই রিপোর্ট দিতে হবে।’ মমতা জানান, ‘দীঘায় সৌন্দর্যায়নের যে কাজ হয়েছিল, তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেচ দফতরের একটা ব্রিজের কাজ ৪-৫ বছর ধরে পড়ে আছে। চেয়ারগুলো পর্যন্ত সমুদ্রে ভেসে গিয়েছে। পাথর পুরোপুরি ভাঙেনি, সে গুলো আরেকটু মজবুত করতে হবে। পাথরের চেয়ার বানাতে হবে, যাতে উড়ে না যায়।’
এর পাশাপাশি, সেচ দফতরের ওপর আরও একবার ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দীঘায় সেচ দফতরের একটি ব্রিজ তৈরি করার কথা ছিল। মমতার দাবি তিনি যখনই জিজ্ঞেস করতেন, তখনই তাঁকে বলা হত, ‘আর ৬ মাস।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘৬ মাস কবে শেষ হবে?’ দ্রুত ওই সেতুর কাজ শেষ করার বার্তা দিয়েছেন তিনি। যশের পর দীঘা উন্নয়ন পর্ষদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি পদত্যাগ করায় আপাতত বর্তমান মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকেই সে দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।