ডোমজুড়ে পরাজয়ের পর থেকেই টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না তাঁর। দলের সঙ্গেও সে ভাবে কোনও যোগাযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির অন্দরে এখন প্রশ্ন উঠছে, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় কোথায়? বিজেপির শীর্ষনেতাদের একাংশের অনুমান, নতুন দলের সঙ্গে দূরত্ব রচনা করে তিনি পুরোন দল তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা করছেন। সে দাবি তৃণমূল শিবিরও করছে। তাদের বক্তব্য, প্রথমে রাজীব বিভিন্ন জনের মাধ্যমে যোগাযোগ করছিলেন। এখন নিজেই যোগাযোগ শুরু করেছেন।
যেমন শাসক দলের এক নেতার দাবি, প্রথমে কয়েকজন সহযোগী ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এবং এখন নিজে বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলছেন রাজীব। তবে এখনও পর্যন্ত রাজীবকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই জানিয়েছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বুধবার বলেন, ‘কারও জন্য আলাদা করে কিছু নয়। ভোটের আগে যাঁরা অন্য দলে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁরা ফিরতে চাইলেই ফিরিয়ে নেওয়া হবে, এমন কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত দলে হয়নি। যাঁদের সেই সময় দমবন্ধ লাগছিল, তাঁদের যদি এখন আবার দমবন্ধ লাগে, তা হলে তো তৃণমূল বিজেপি দফতরে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাঠাতে পারবে না!’ অন্যদিকে, বিজেপি বলছে, রাজীব যে রাজনৈতিক জল মাপছেন সেটা তাঁর টুইটার হ্যান্ডল দেখলে স্পষ্ট হবে। ভোটের ফল ঘোষণার পরে রাজ্যে এত রাজনৈতিক ঘটনা পরম্পরা চললেও তিনি ‘অক্ষয় তৃতীয়া’, ‘ইদ’, ‘মাতৃ দিবস’ ইত্যাদির শুভেচ্ছা জানিয়েই ক্ষান্ত থেকেছেন।
প্রসঙ্গত, ডোমজুড় থেকে ২০১১ এবং ২০১৬ সালের ভোটে পরপর দু’বার বিধায়ক হন রাজীব। শেষ বার জয়ের ব্যবধান ছিল ১ লাখেরও বেশি। কিন্তু এ বার হেরেছেন ৪২ হাজারের সামান্য বেশি ভোটে। চার্টার্ড বিমানে করে দিল্লী গিয়ে অমিত শাহের বাড়িতে বিজেপিতে যোগদানের পর থেকে গোটা নির্বাচন পর্বে গেরুয়া শিবিরের প্রথম সারির নেতা হিসেবেই গুরুত্ব পেয়েছেন রাজীব। হাওড়া জেলা তো বটেই, অন্যান্য জায়গার প্রার্থীতালিকা চূড়ান্ত করার বৈঠকেও প্রাধান্য পায় তাঁর বক্তব্য। কিন্তু শুধু ডোমজুড়েই নয়, রাজীবের ভরসায় থাকা হাওড়া জেলায় বিজেপি একটি আসনেও জয় পায়নি। ১৬টিতেই জয় পেয়েছে তৃণমূল। আবার, ২ মে ভোটের ফল ঘোষণা হয়েছিল। এর পরে ২ জুন পর্যন্ত এক মাসে রাজীব নাকি বিজেপির কোনও বৈঠকেই হাজির হননি। হেস্টিংসে বিজেপি অফিসে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ঘর তো দূরের কথা, কোনও ভার্চুয়াল বৈঠকেও তাঁর উপস্থিতি ছিল না বলেই দাবি করছেন পদ্মনেতারা।
এখানেই শেষ নয়। ‘ভোট-পরবর্তী হিংসা’ নিয়ে বিজেপি নেতারা সরব হলেও ডোমজুড়ে যে সব কর্মীরা আক্রান্ত বলে দাবি করা হয়েছে, তাঁদের পাশেও দেখা যায়নি তাঁকে। যশের পর বিজেপির পক্ষ থেকে সব বিধায়ক ও প্রার্থীকে নিজের নিজের এলাকায় যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ডোমজুড়ের বিজেপি কর্মীদের দাবি, রাজীবকে সেখানেও দেখা যায়নি। রাজীব যে তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা করছেন সেটা রাজ্য বিজেপি নেতারা আড়ালে স্বীকার করলেও এখনই এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না। যেমন এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি হাতে করে বিধানসভা ছাড়ার মধ্য দিয়েই রাজীব অনেক কিছু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা সে সব দেখে, বুঝেও কিছু বলেননি। রাজীবকে সত্যি সত্যিই মাথায় করে রাখা হয়েছিল। এখন বিপদের সময় তাঁর টিকিটি দেখা যাচ্ছে না।’