কথায় বলে, নিজের বেলায় আটিশুটি, পরের বেলায় দাঁতকপাটি। মোদী সরকারেরও এখন এমনই অবস্থা। যখন বিরোধীরা কোভিডের নতুন স্ট্রেনকে ‘ভারতীয় স্ট্রেন’ বলেছিল, তখন মোদী সরকার তথা বিজেপি ঘোর আপত্তি তুলেছিল। কিন্তু এবার দেখা গেল, খোদ সরকারই সুপ্রিম কোর্টে হলফনামায় একে ‘ইন্ডিয়ান ডাবল মিউট্যান্ট স্ট্রেন’ বলে তকমা দিয়েছে। যা দেখে কংগ্রেসের কটাক্ষ, এবার কি মোদী সরকার নিজেই নিজেকে দেশদ্রোহী বলবে!
প্রসঙ্গত, মোদী সরকারের অভিযোগ ছিল, বিরোধীরা ভাইরাসের স্ট্রেনের সঙ্গে দেশের নাম জুড়ে গোটা বিশ্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তথা ভারতের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাইছে। এ জন্য কংগ্রেস অপপ্রচারের কৌশল হিসেবে ‘টুলকিট’-ও তৈরি করেছে বলেও বিজেপি নেতারা অভিযোগ তুলেছিলেন। শনিবারও বিজেপি অভিযোগ তুলেছে, কংগ্রেস করোনার স্ট্রেনকে ‘ইন্ডিয়ান স্ট্রেন’ বলায় পাকিস্তানের হাত শক্ত হয়েছে। পাকিস্তানও সে দেশে মেলা নতুন স্ট্রেনকে ভারতীয় স্ট্রেন বলে প্রচার করছে।
শুধু তাই নয়, গত সপ্তাহেই মধ্যপ্রদেশে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতা কমল নাথের বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর দায়ের করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের পুলিশের অভিযোগ, তিনি ভাইরাসের স্ট্রেনকে ভারতীয় বলে আতঙ্ক তৈরি করছেন। এদিকে, কমল নাথের যুক্তি ছিল, তিনি কোভিড মোকাবিলা নিয়ে সরকারের দিকে আঙুল তুলেছেন বলেই তাঁকে দেশদ্রোহী সাজানো হচ্ছে। এখন মোদী সরকার নিজেরাই একে ‘ভারতীয় স্ট্রেন’ আখ্যা দেওয়ায় কংগ্রেসের প্রশ্ন, এবার কি মোদী সরকার নিজেই নিজেকে দেশদ্রোহী বলবে?
উল্লেখ্য, গত ৯ মে কোভিড মোকাবিলা নিয়ে মামলায় কেন্দ্র যে হলফনামা পেশ করেছে, সেখানে মোদী সরকারই ভাইরাসের নতুন স্ট্রেনকে ‘ইন্ডিয়ান ডাবল মিউট্যান্ট স্ট্রেন’ বলে উল্লেখ করেছে। আইসিএমআর ও পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভায়রোলজি কোভ্যাক্সিন তৈরিতে কী কী পদক্ষেপ করেছে, সে প্রসঙ্গে নতুন ভাইরাসের স্ট্রেনকে ভারতীয় বলা হয়েছে। অথচ তার তিন দিন পরেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বিবৃতি জারি করে নতুন স্ট্রেনকে ভারতীয় স্ট্রেন নাম দেওয়ার কড়া নিন্দা করেছিল।
যুক্তি ছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-ও এই স্ট্রেনের সঙ্গে ভারতের নাম জড়ায়নি। এর পর হু-ও স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তারা কোনও স্ট্রেনের সঙ্গেই কোনও দেশের নাম জড়ায়নি। কিন্তু মজার কথা হল, কেন্দ্রীয় সরকার হলফনামায় শুধু ডাবল মিউট্যান্ট স্ট্রেনের সঙ্গে ভারতের নাম যোগ করেছে না নয়, অন্যান্য স্ট্রেনের সঙ্গেও ব্রিটেন, ব্রাজিলের মতো দেশের নাম যোগ করেছে।
