বুধবার দিঘা, তাজপুর, মন্দারমণির মতো বাংলার উপকূলীয় এলাকাগুলিতে ঘূর্ণিঝড় যশ দাপট দেখানোর পর থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, যশের তাণ্ডবে কার্যত মেরুদন্ড ভেঙে যাওয়া পর্যটন শিল্প ঠিক কতদিনে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? কারণ, পর্যটকরাই মূলত এখানকার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। কাজেই তাঁরা না এলে সমস্যা যে বাড়বে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হওয়া প্রবল সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস সুনামির মতো তিন পর্যটন কেন্দ্র-সহ পুরো উপকূল এলাকা লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। ঝড় শেষে জল ফিরে গিয়েছে সমুদ্রে। কিন্তু সৈকত জুড়ে তাণ্ডবের দগদগে ক্ষত এখনও বর্তমান। তিন জায়গাতেই এখন শুধু ধ্বংসলীলার চিহ্ন। বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি নতুন করে অবনতি না হলেও এই ক্ষত সারিয়ে উপকূলের পর্যটন শিল্প কবে ঘুরে দাঁড়াবে সেই প্রশ্নই পাক খাচ্ছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার মানুষের মনে।
ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে নষ্ট হয়ে গিয়েছে দিঘার সৌন্দর্যায়নের প্রায় সব কিছুই। বিশ্ব বাংলা সহ ছোট বড় পার্কের সব কিছু ভেঙে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। পাথর, রেলিং সব উপড়ে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। সমুদ্রের পাড় থেকে বড় বড় পাথরের চাঁই উঠে ছিটকে পড়েছে রাস্তার ওপর। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জগন্নাথ ঘাটে। জমা জল সরলে দেখা যায় পর্যটকদের বসার বেঞ্চ বেশিরভাগ জায়গায় ভেঙে গিয়েছে। গার্ডওয়ালের ওপর বসার জন্য শ্বেতপাথর দিয়ে বাঁধানো বসার জায়গাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা পর্যন্ত দু’হাজারের বেশি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দোকান রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি সমুদ্রের জল দিঘা-মন্দারমণি-তাজপুরের অনেক হোটেলেও ঢুকে পড়ে। মন্দারমণির সমুদ্র লাগোয়া হোটেলগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গিয়েছে সুইমিং পুল,স্পা-সহ হোটেলের বিভিন্ন জিনিসপত্র। মন্দারমণি ও তাজপুরের বেশিরভাগ হোটেলের একতলাতে জল ঢুকে পড়ায় টিভি ,ফ্রিজের মতো ইলেকট্রনিক্স জিনিস নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ধসে পড়েছে হোটেলের পাঁচিল।
মন্দারমণি হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবদুলাল দাস মহাপাত্র বলেন, “সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে হোটেল ও সৌন্দর্যায়নের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে এখানেও। এখনই নির্দিষ্টভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা সম্ভব না হলেও ধাক্কা সামলাতে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে হোটেল শিল্পকে।” ঠিক একই কথা ঘোরাফেরা করছে দিঘা-তাজপুরের পর্যটন ব্যবসায়ীদের মুখে মুখে।