বুধবার রাত আড়াইটেয় আগুন লেগেছিল উত্তর ২৪ পরগনার নিউ ব্যারাকপু্র পুরসভার অন্তর্গত বিলকান্দা শিল্পতালুকে অবস্থিত এক গেঞ্জি কারখানায়। ৩০ ঘণ্টা পরেও এখনও দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। সেই আগুনের তেজ এতই যে না বৃষ্টি, না দমকলের ২৪টি ইঞ্জিন, না রোবট কেউই তা বাগে আনতে পারেনি। এমনকি কারখানার দেওয়াল ভেঙে জল ঢেলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বৃষ্টির মধ্যে দমকলকর্মীরা লড়াই তো চালিয়েইছেন, রাতভর ঘটনাস্থলে ছিলেন রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু।
এদিন সকালে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনও কারখানার ভিতরে ঢুকতে পারেননি দমকলকর্মীরা। আর তার জেরেই মনে করা হচ্ছে কারখানার ভিতরে আটকে পড়া ৪ শ্রমিকের কেউই আর জীবিত নেই। নিখোঁজ এই চার শ্রমিক হলেন, সুব্রত ঘোষ(২৮), তন্ময় ঘোষ(৩২), অমিত সেন(৩০) ও স্বরূপ ঘোষ(২২)। এদের মধ্যে প্রথম ২ জনের বাড়ি চাকদহে। বাকি ২জনের বাড়ি হরিণঘাটা ও অশোকনগরে। যদিও সরকারি ভাবে এখনও কিছু ঘোষণা করা হয়নি।
দমকলের আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, আগুন লাগার জেরে যে তাপ ও ধোঁয়া উৎপন্ন হয়েছে আর আগুন যেভাবে গোটা ৩তলা বাড়িটিকে গ্রাস করেছে তাতে করে কারও জীবিত থাকা অসম্ভব। যারা নিখোঁজ রয়েছেন তাঁরা যে কেউ আর জীবিত নেই সেটাই এখন ধরে নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের দেহও মিলবে কিনা সন্দেহ। যদিও বা মেলে তা শনাক্তকরণের পর্যায়ে থাকবে না। সেক্ষেত্রে দেহ শনাক্তকরণের জন্য ডিএনএ টেস্টই একমাত্র ভরসা।
এদিন দমকল কর্মীরা বিল্ডিংয়ের একটি অংশ ভেঙে ফেলেছেন। ভাঙা হয়েছে জানলার কাঁচ। তা সত্ত্বেও কারখানার ভিতরে ঢুকতে পাচ্ছেন না দমকল কর্মীরা। প্রচুর দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায়, দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা আগুন নেভার বদলে বারবার জ্বলে উঠছে। যদিও দমকলের দাবি, এদিন ভোর থেকেই আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে, কোথাও কোথাও পকেট ফায়ার রয়ে গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে এই গেঞ্জি কারখানায় আগুন লাগে। কারখানার পিছনের দিকে ছিল এক বেসরকারি হাসপাতালের গুদাম। সেখান মজুত প্রচুর পরিমাণ মেডিক্যাল সরঞ্জাম অর্থাৎ ডায়াপার, স্যানিটাইজার, বেবি ফুড। এসবই অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ। তাই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তার জেরেই সম্ভব কারখানার ভিতরে থাকা চারজন আটকে পড়েন। এত বড় অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে গতকাল মাঝরাত পর্যন্ত নিজে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থেকে অগ্নিনির্বাপণের তদারকি করেছেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু।
তবু গোটা একটা দিন পেরিয়ে গেলেও, দমকলের প্রায় ২৪টি ইঞ্জিনের সাহায্য নিয়েও আগুন সম্পূর্ণ আয়ত্তে আনা যায়নি। প্রাথমিকভাবে দমকলের অনুমান, কারখানাটিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যথাযথ ছিল না। তাই এতটা সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে আগুনের দাপট দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায় নিশ্চিত, যে চারজন কারখানার ভিতরে আটকে রয়েছেন, তাঁদের কাউকেই আর জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলে দমকলকর্মীরা কারখানার ভিতরে গিয়ে শ্রমিকদের খোঁজ করবেন বলে জানা গিয়েছে।