এই তো কিছু বছর আগের কথা। ফ্রক পরা ছোট্ট মেয়েটা, রামপুরহাট স্টেশন থেকে সাইকেল রিকশায় চেপে রাঙামাটির পথ ধরে কুসুম্বা গ্রামে মামাবাড়িতে আসত। কিন্তু সেই ছোট্ট মেয়েটা আজ আর ছোট্টটি নেই। সেই মেয়েটা এখন এতটাই ‘বড়’ হয়ে গেছে যে সে আজ গোটা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। গোটা দেশই তাঁকে ‘দিদি’ বলে ডাকে। আজ, মুখ্যমন্ত্রী পদে ভাগনির তৃতীয়বার শপথের আগের দিন ভাগ্নীর ছবির দিকে তাকিয়ে আবেগে ভাসলেন মামা অনিল মুখোপাধ্যায়। কোভিড পরিস্থিতি ও নিজের অসুস্থতার জন্য এবার কলকাতার কালীঘাটে যেতে পারছেন না মামা। তবে ফোনে ভাগ্নীকে অভিনন্দন ও আশীর্বাদ জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘খুব কষ্ট করেছে মমতা। ওর কিছু নেই। আছে শুধু লক্ষ লক্ষ জনগণের আশীর্বাদ। ও আরও বেশি করে মানুষের হয়ে কাজ করুক। আজ দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা) বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন। আমি ওকে দেশের প্রধানমন্ত্রী দেখতে চাই।’
প্রসঙ্গত, রামপুরহাটের কুসুম্বা গ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামার বাড়ি। পৈতৃক ভিটে কুসুম্বা লাগোয়া চাকাইপুর গ্রাম হলেও মামার বাড়িতেই জন্ম মমতার। এই এলাকাতেই প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর। ন’বছর বয়সে কলকাতা পাড়ি দেন। প্রতি ডিসেম্বর মাসে পরীক্ষার শেষে মামার বাড়ি চলে আসতেন। মাসখানেক থেকে আবার কলকাতায় ফিরে যেতেন। তখনকার সেই সাধারণ মেয়েটির অসাধারণ হয়ে ওঠার পিছনে ছিল অদম্য জেদ। অনিলবাবু বলেন, ছোটবেলায় অধিকাংশ সময় ও আমাদের বাড়িতেই থাকত। এখনও এই এলাকার বহু পুকুর ও জমির নাম মনে রয়েছে ওর। ছটফটে সেই ছোট্ট মেয়েটি কখনও গোরুর গাড়ির পিছনে দুলতে দুলতে জমিতে চলে যেত। জমি থেকে কলাই তুলে খেত। আবার কখনও নাওয়া খাওয়া ভুলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পুকুরে মাছ ধরা দেখত। কলাইভাজা, মুড়ি ছাড়াও ভাজাভুজি, নারকেল নাড়ু খেতে ভালোবাসত। প্রতিবাদী চরিত্রের সেই ছোট্ট ভাগনি এখন রাজ্যের উন্নয়ন করছে। গর্বে বুক ভরে যায়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি রামপুরহাটে প্রশাসনিক সভা করতে এসে মামার বাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময় মামিমার হাত থেকে মিষ্টি খেয়েছিলেন। এর মাঝে কেটে গিয়েছে দু’বছর। মামিমা তাপসী মুখোপাধ্যায় মারা গিয়েছেন। অনিলবাবু বলেন, এর আগে দু’বার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের দিন কালীঘাটে মমতার বাড়ি গিয়েছিলেন স্ত্রী। বেঁচে থাকলে এবারও ওকে আটকে রাখা যেত না। এবার আমার যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ও শারীরিক অসুস্থতার জন্য যাওয়া হচ্ছে না। তবে ভাগ্নীকে ফোনে অভিনন্দন ও আশীর্বাদ জানিয়েছি। সেও গ্রামের খবরাখবর নিয়েছে। টিভিতে ভাগনির শপথ অনুষ্ঠান দেখব। আমি চাই এভাবেই ও বাংলার সবাইকে নিয়ে এগিয়ে চলুক। মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা আর জেদই ওকে একদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী করবে। মমতার মামাতো ভাই নীহার মুখোপাধ্যায় বীরভূম জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, রাজ্যের সর্বত্র উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাটের আরও বেশি বেশি উন্নয়ন করুক দিদি, এটাই চাই।