প্রাক্তন তৃণমূল নেতা তথা বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের খাস তালুক। একসময় যা ছিল লাল দুর্গ, সেই বীজপুরই ২০১১ সালে রাতারাতি চলে গিয়েছিল সবুজ শিবিরের দখলে। কিন্তু যার হাত ধরে এই বিধানসভায় আধিপত্য এসেছিল তৃণমূলের কাছে, সেই মুকুল রায় গত ২০১৭ সাল থেকেই বিজেপিতে। এমনকি স্থানীয় বিধায়ক মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়ও বিজেপিতে যোগ দেন গত লোকসভা নির্বাচনের পর।
এই একুশের নির্বাচনে সেখানে তিনি বিজেপি প্রার্থী। তবে গড় ধরে রাখতে তৃণমূলের বাজি আবার সুবোধ অধিকারী। যিনি আবার বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। হালিশহরের বাসিন্দা সুবোধের রাজনীতির লড়াই ছিল বরাবর অর্জুন সিংহ, মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে। আজও সেই লড়াই জারি রয়েছে। যখন শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তুলছে বিজেপি, ঠিক তখনই বিজেপির পরিবারতন্ত্রের ইস্যুটি হাতিয়ার করে ভোট ময়দানে নেমে পড়েছেন সুবোধ। অন্যদিকে, বীজপুরে সংযুক্ত মোর্চার তরফে লড়ছেন সিপিএমের সুকান্ত রক্ষিত।
কাঁচরাপাড়া ও হালিশহর পুরসভা নিয়ে গঠিত বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্রটি। এটিও বারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। স্বাধীন ভারতের প্রথম নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জিতেছিল সিপিআই। প্রথম বিধায়ক হয়েছিলেন নিরঞ্জন সেনগুপ্ত। ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত টানা এই কেন্দ্র থেকে জিতেছেন জগদীশ চন্দ্র দাস। ২০০১ সালেও তিনি জেতেন। ১৯৭১ ও ১৯৭২ সালের নির্বাচনে তিনি জিতেছিলেন কংগ্রেসের টিকিটে। পরে ফের সিপিএমে ফিরে আসেন।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে বীজপুরের সিপিএমের তৎকালীন বিদায়ী বিধায়ক নির্ঝরিণী চক্রবর্তীকে ১২ হাজার ৬১২ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের জন্য বিধায়ক হয়েছিলেন শুভ্রাংশু রায়। এরপর ২০১৬ সালে সিপিএমের রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে ৪৭ হাজার ৯৫৪ ভোটে হারিয়ে ছিলেন। পরের বছর শেষের দিকে বাবা মুকুল রায় বিজেপিতে যোগদান করলেও শুভ্রাংশু সেইসময় জানিয়েছিলেন, দিদিই তাঁকে বিধায়ক করেছেন তাই সারাজীবন দিদির সঙ্গেই থাকবেন। তবে গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের প্রকাশের পরই শুভ্রাংশুকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল। তারপরই তিনি রাতারাতি পদ্মশিবিরে যোগ দেন। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বীজপুর বিধানসভা থেকে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছিল ৭ হাজার ৮৯৬ ভোটে।
শুভ্রাংশু রায় বিজেপিতে যোগদানের পর পরই ভাটপাড়ার মতোই অশান্ত হয়ে উঠেছিল বীজপুর। গতকালও রাজনৈতিক সঙ্ঘর্ষের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল এলাকা। আগামী ২২ তারিখ ষষ্ঠ দফায় ভোটগ্রহণ এই কেন্দ্রে। সেদিনও ফের অশান্তির আশঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ। যে কারণে অতিরিক্ত পদক্ষেপ করতে পারে নির্বাচন কমিশনও। তবে ঝামেলা-সঙ্ঘর্ষের মাঝেও এই কেন্দ্রটি দখল করাই মূল লক্ষ্য প্রত্যেকটি দলের কাছে। বিশেষ করে বীজপুরে লড়াই মূলত বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে। একজন তৃণমূল থেকে গিয়ে বিজেপির প্রার্থী আর অন্যজন বিজেপি থেকে গিয়ে তৃণমূলের প্রার্থী। আর এখানেই জমে উঠেছে লড়াই।