গত এক-দেড় মাসে গোটা দেশের পাশাপাশি বাংলাতেও বিপুল হারে বাড়ছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। এভাবে সংক্রমণ ছড়ানোর কারণে ফের পুরনো করোনা বিধিতে ফেরার পরামর্শ দিল নবান্ন। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নবান্নে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের পর রাতে নতুন অ্যাডভাইজারি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি যথাসম্ভব যেন ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু করে। কিংবা কর্মচারীদের একাধিক শিফটে বা রোটেশনে কাজ করতে বলে। সপ্তাহে অন্তত এক বার সরকারি ও বেসরকারি অফিস স্যানিটাইজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কী হারে বাড়ছে তা একটি পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার। ঠিক এক মাস আগে ১৭ মার্চ বাংলায় কোভিড অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজারের সামান্য বেশি। কিন্তু এখন তা বেড়ে ৪৫ হাজার ছাড়িয়েছে। শনিবার স্বাস্থ্য দফতর যে বুলেটিন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে শুধু কলকাতাতেই কোভিড অ্যাকটিভ রোগীর সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি। কলকাতার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে প্রতিবেশী উত্তর ২৪ পরগনাও। দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া ও হুগলিতেও ক্রমশ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ৭,৭১৩ জনের শরীরে কোভিড পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে।
গতকাল নবান্নের তরফে বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তা হল- এখন পাবলিক প্লেসে বা গণ পরিবহণে বাধ্যতামূলক ভাবে সকলকে মাস্ক পরে চলাচল করতে হবে। সেই সঙ্গে সকলকে যথাযথ ভাবে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। এছাড়াও, সমস্ত বাজার ও সুপার মার্কেটগুলি নিয়মিতভাবে স্যানিটাইজ করতে হবে। এ ব্যাপারে বাজারের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলিকেই সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
অন্যদিকে, এখন থেকে সরকারি দফতরে ৫০ শতাংশের বেশি কর্মচারী একসঙ্গে উপস্থিত থাকতে পারবে না। সকলকে রোটেশনের ভিত্তিতে কর্মদিন ভাগ করে নিতে হবে। সমস্ত রেস্তোরাঁ, মল, সুপার মার্কেটে প্রবেশের আগে থার্মাল স্ক্যানিং, হ্যান্ড স্যানিটাইজেশন বাধ্যতামূলক ভাবে করতে হবে এবং স্যুইমিং পুল, স্টেডিয়াম, সভাঘরগুলিকে কোভিড প্রোটোকলগুলি কড়াভাবে পালন করতে হবে।
বস্তুত গতকাল সন্ধ্যায় নবান্নের তরফে এই নির্দেশিকা প্রকাশের আগেই দেখা যায়, রাস্তায়, বাজার ও শপিং মলগুলিতে ভিড় বেশ পাতলা। এমনকি গত ২-৩ দিনে ট্রেনে বাসে লোকও কম চোখে পড়েছে। নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার কারণে একাংশ মানুষের মধ্যে ভীতি সঞ্চারের জেরে সতর্কতা বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে নবান্নের উচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্তারা এখন আর বিষয়টিকে হাল্কা ভাবে নিতে নারাজ। তাই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।