অসমের পর এনআরসি ইস্যুতে এবার নিজভূমিতে বিতাড়িত হওয়ার আশঙ্কা শুরু হল বাংলাতেও। আর ঠিক বাংলায় সরকার গড়ার ভোটের মুখেই। তাই বিজেপিশাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে বঙ্গবাসীর। চলতি বিধানসভা ভোটে তার কড়া জবাব মিলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উত্তরবঙ্গের হাজার হাজার বাসিন্দা।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে অসমে। বাংলা সীমানার ওপারেই। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলার বহু বাসিন্দার মেয়ে বৈবাহিক সূত্রে অসমের বাসিন্দা। এনআরসির ওই তালিকায় দেখা গিয়েছে তাঁদের নাম নেই। তা জেনেই কপালে হাত তালিকা থেকে বাদ পড়া বাসিন্দা সহ বাংলায় থাকা তাঁদের পরিবার পরিজনদের। অসমে তাঁদের মেয়েকে বিতাড়িত হতে হবে এটা ভেবেই আঁতকে উঠছেন মা-বাবারা। একই সঙ্গে বিজেপি এরাজ্যে ক্ষমতায় এলে তাঁদের দশাও যে এমনটাই হবে, এই ভেবে ভয়ে রাতের ঘুম ছুটে গিয়েছে এপার বাংলার কয়েক লক্ষ মানুষেরও। আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রাম ব্লকের বাসিন্দা সুবল দাসের বোন বিনতা দাস অসমে থাকেন। সদ্য প্রকাশিত এনআরসি তালিকাতেও তাঁর নাম ওঠেনি। এদিন সুবলবাবু জানান, “অসম থেকে বোন বার বার ফোন করে বলছে, অসমে যদি বিজেপি ফের ক্ষমতায় আসে, এবার তাহলে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে যাবে তাঁকে। তাই ২রা মে ভোটের ফল বেরনোর আগেই বোনকে কুমারগ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসব। আর বাংলায় যাতে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় না আসতে পারে, তার জন্য এবার আরও এককাট্টা হব।”
আরেকজন অসমের গোঁসাইগাঁও জেলার শিমুলটাপুরের গৃহবধূ গিরিবালা বড়ুয়া। বিনতাদেবীর মত গিরিবালাদেবীর বাপের বাড়িও আলিপুরদুয়ারের প্রত্যন্ত গ্রামে। বলছেন, “ভয় হচ্ছে যদি বাংলাতেও বিজেপি সরকার আসে। তখন তো আমার মতো আমার বাপের বাড়ির লোকদেরও নাম এনআরসির তালিকায় উঠবে না। এনিয়ে খুবই আতঙ্কে আছি।” প্রসঙ্গত, অসমে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা থেকে প্রায় সাড়ে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। ওই তালিকায় রয়েছেন প্রচুর বাঙালিও। আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারের বহু মেয়ের বিয়ে হয়েছে অসমে। যাঁদের অনেকেরই নাম অসমের এনআরসির তালিকায় ওঠেনি। এনআরসির তালিকায় নাম না ওঠায় সেখানে আতঙ্ক তাড়া করছে অসমে বিয়ে হওয়া মহিলাদের। এবার বাংলার ভোটেও বিজেপি এনআরসির জুজু দেখিয়ে ভোট চাওয়ায় তাঁদের মনে ভয় ঢুকেছে, বাংলাতেও তাঁদের বাবা-মাকে বাস্তুচ্যুত হতে হবে নাতো? বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে আলিপুরদুয়ারে থাকা তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের নামও এইভাবে এনআরসি’র তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার ভয় তাড়া করছে তাঁদের। এ রাজ্যে এনআরসি হলে কী হবে তাঁদের, তা নিয়ে উত্তরবঙ্গের বহু বাসিন্দা আতান্তরে পড়েছেন। অনেকেই সঠিক পরিচয় পত্র, জমির দলিল, রেশন কার্ডে কোনও ভুলচুক আছে কি না দেখে নেওয়া শুরু করেছেন। ভোটের মুখে
এনআরসি নিয়ে বঙ্গবাসীর আতঙ্ক যে হারে বাড়তে শুরু করেছে, তাতে বিজেপির প্রতি জনরোষও প্রবল হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলায় এর ধাক্কা পড়বে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্কেই।
এদিকে, দলের অন্দরেই ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় এনআরসি নিয়ে সতর্ক আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার জেলার বিজেপি নেতৃত্ব। আলিপুরদুয়ার জেলা বিজেপি সূত্রের খবর, আর তিনদিন পরে ভোট। এখন এই আতঙ্ক যে ভাবে ছড়াচ্ছে তাতে, দলের প্রতি সমর্থন ধাক্কা খাবে। ভোটে এর প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে, আলিপুরদুয়ার পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূল নেতা মিহির দত্ত বলেন, “বিজেপি যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, অসমের মানুষ তা টের পেয়েছে। এবার বাংলাতেও তার রেশ পড়তে শুরু করেছে। এনআরসি জুজু শুধু সংখ্যালঘু নয়, সবাইকেই আতঙ্কিত করছে। মানুষ ভোটে এর জবাব দেবে।” ভোটের মুখে ভোটারদের একটা বড় অংশ দলের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন বুঝতে পেরে চিন্তিত পদ্মশিবির।