এবার বাংলাজুড়ে মমতার হয়ে প্রচারে নামলেন প্রতিবন্ধীরা। দু’পায়ে ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না ফুলিয়ার বুইচা বসাকপাড়া গৃহবধূর কল্পনা নাগ। হুইলচেয়ারই তাঁর ভরসা। মানবিক প্রকল্পে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের দেওয়া প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা তিনি পাচ্ছেন। শুধু কল্পনাদেবীই নন, প্রায় সাত হাজার প্রতিবন্ধী এই ভাতা পাচ্ছেন। এতে তাঁরা উচ্ছ্বসিত। কাজেই ভোটের আগে কোনও দলীয় পতাকা বা প্রতীক চিহ্ন ছাড়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে প্রচারে চালাচ্ছেন প্রতিবন্ধীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, “মানবিকের কোনও রাজনৈতিক রং হয় না, দল হয় না। তাই ভাতা পেয়ে মনের টানেই আমরা মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে প্রচার করছি।”
প্রতিবন্ধীদের সংগঠন অখিল ভারত কল্যাণ সমিতির নদীয়া জেলা সভাপতি শুভাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “বাড়িতে বসে প্রতিবন্ধীদের মাসে এক হাজার টাকা পাওয়াটা কম কথা নয়। আমরাও তৃতীয়বারের জন্য দিদিকে মুখ্যমন্ত্রী চাই। আমাদের চাওয়াটা কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে নয়, রংয়ের নয়। সম্পূর্ণই মনের। সেজন্য আত্মীয়-পরিজন, প্রতিবেশী যাঁদের কাছে পাচ্ছি দিদিকে ভোট দিতে বলছি।”
ফুলিয়া বুইচা এলাকায় ঢোকার মুখেই চোখে পড়ে রাস্তার পাশে নির্বাচনী দেওয়াল লিখনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর হুইলচেয়ারে করে প্রচারের দৃশ্য। সাদা নীলপাড়ের শাড়িতে তিনি বসে রয়েছেন হুইলচেয়ারে। তাঁর বাঁ পায়ে প্লাস্টার। করজোড়ে তিনি ভোটপ্রার্থনা করছেন। এই দৃশ্য দেখতেই বেশ কিছুটা পথ হুইলচেয়ারে এসেছিলেন এলাকার প্রতিবন্ধী গৃহবধূ কল্পনা নাগ। তিনি বলেন, “শুনেছি এখানে দেওয়ালচিত্র হয়েছে। তাই মন মানল না, দেখতে এলাম। ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি, মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত ভালো হয়ে উঠুন। তিনি আরও বলেন, আমি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। তবে প্রতিমাসে মানবিক ভাতা পাই। তাই দিদিকে আবার মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চাই। সেজন্য আত্মীয়-পরিজন, প্রতিবেশীদের দিদিকে ভোট দিতে বলছি।”
পাশপাশি বীরনগরের প্রতিবন্ধী এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “আগেও সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা চালু ছিল। কিন্তু তৃণমূল সরকারের জমানায় সেই ভাতা পেতে জটিলতা দূর হয়েছে। জানা গিয়েছে, আগে এই ভাতা পেতে আবেদনকারীকে ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শংসাপত্র লাগত। এছাড়া আবেদনকারীকে অবশ্যই বিপিএল তালিকাভুক্ত হতে হতো। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর রাজ্যজুড়ে প্রায় ৪৪ হাজার প্রতিবন্ধীকে এই ভাতা দেওয়া শুরু হয়। এরপর ২০১৬ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য এই ভাতা চালু হয়। এছাড়া তুলে দেওয়া হয় আবেদনকারীকে বিপিএল তালিকাভুক্ত থাকার বিষয়টি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ৪০ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করে রাজ্য সরকার। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শান্তিপুর ব্লকে প্রায় আড়াই হাজার ও শান্তিপুর পুরসভার এলাকায় প্রায় সাতশো মানুষ এই সুবিধা পাচ্ছেন।” এ বিষয়ে নদীয়া জেলা পরিষদের মেন্টর তৃণমূলের বাণীকুমার রায় জানিয়েছেন, “আমাদের সরকার যে মানবিক এটা তারই উদাহরণ।”