আগেই জানা গিয়েছিল, ৫ মার্চ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতোই প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুক্রবার কালীঘাটের বাড়ি থেকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য তৃণমূলের পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছেন মমতা। যাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নতুন ও তরুণ মুখের ওপর আস্থা রেখেছেন তিনি। আলিপুরদুয়ার জেলার পাঁচটি বিধানসভা আসনের মধ্যে চারটি আসনেই নতুন মুখ আনল তৃণমূল। একমাত্র আলিপুরদুয়ার আসনে থেকে গেলেন সৌরভ চক্রবর্তী।
মাদারিহাটে প্রার্থী করা হয়েছে রাজেশ লাকড়া ওরফে টাইগারকে। নতুন মুখ টাইগার ছাড়াও আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনিতে পাশাং লামা, কুমারগ্রামে লিউস কুজুর ও ফালাকাটায় সুভাষ রায়কে প্রার্থী করা হয়েছে। ফালাকাটায় তৃণমূলের দু’বারের বিধায়ক ছিলেন অনিল অধিকারী। ২০১৮ সালে তিনি মারা যান। তাঁরই রাজনৈতিক ‘ছাত্র’ পেশায় কৃষক সুভাষ রায় ফালাকাটার প্রার্থী হওয়ায় গতকাল বিকেলে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা অকাল হোলিতে মেতে ওঠেন। সুভাষ বলেন, প্রার্থী হিসেবে নেত্রী আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। জিতলে অনিলবাবুর উন্নয়নের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই হবে আমার প্রথম কাজ।
মাদারিহাটের রাজেশ লাকড়া একসময় বিজেপি এমপি জন বারলার ডানহাত ছিলেন। দু’জনেরই বাড়ি জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি ব্লকের লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে। দু’জনেই আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা ছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনকে সমর্থন করায় ডুয়ার্সে আদিবাসীদের তরুণ নেতা রাজেশবাবু জন বারলার সঙ্গ ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক টানতে সেই টাইগারকে মাদারিহাটে প্রার্থী করে তৃণমূল নেত্রী মাস্টার স্ট্রোক দিলেন বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। রাজেশ বলেন, আমাকে প্রার্থী করার জন্য নেত্রীকে ধন্যবাদ। আমি বহিরাগত নই। কারণ, মাদারিহাট বিধানসভার সীমানাতেই আমার বাড়ি।
আবার কালচিনির হ্যামিলন্টনগঞ্জের ট্রলি লাইনের বাসিন্দা পাশাং লামা ব্যবসায়ী। চা বাগান আন্দোলনে পরিচিত মুখ। দলের জেলা কো-অর্ডিনেটর পাশাংকে প্রার্থী করে এবার চমকই দিল তৃণমূল। ডুয়ার্সে আদিবাসী সমাজের ও চা বাগান আন্দোলনের আরএক মুখ লিউস কুজুর। আদিবাসী চা শ্রমিকদের উন্নয়নের লক্ষ্যে কুমারগ্রাম বাগানের শ্রমিক পরিবারের ছেলে লিউস বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, কুমারগ্রামে বিজেপিকে ধাক্কা দিতে লিউসকে প্রার্থী করল তৃণমূল। এদিকে, আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, দলনেত্রী ফের আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। দ্বিতীয়বার ভোটে জিতলে জেলার উন্নয়নকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব।
অন্যদিকে, জলপাইগুড়ি জেলার সাতটি আসনের মধ্যে নতুন মুখ দু’জন। ময়নাগুড়ির বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারীকে এবার টিকিট দেওয়া হল না। ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে মনোজ রায়কে। জলপাইগুড়িতে ধত্রীমোহন রায়ের জায়গায় প্রার্থী করা হল ডাঃ প্রদীপকুমার বর্মাকে। শহরের বাবুপাড়ার বাসিন্দা ৬৬ বছর বয়সি চিকিৎসক প্রদীপ দলের কো-অর্ডিনেটর। তিনি বলেন, দল এখন অনেক বেশি শৃঙ্খলাবদ্ধ। আমরা একসঙ্গে লড়ব। পুরনোদের মধ্যে ধূপগুড়ি কেন্দ্রে মিতালি রায়, ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি আসনে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব, রাজগঞ্জে খগেশ্বর রায়, মালবাজারে বুলু চিকবরাইক এবং নাগরাকাটায় জোশেফ মুণ্ডার ওপরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আস্থা রেখে তাঁদের টিকিট দিয়েছেন।