যাঁরা বলে তাদের দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয়, তাঁরা এসে দেখা যাক। রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে এমনটাই বলতে শোনা গিয়েছে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে। আবার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী ব্রিগেডের মঞ্চে দাঁড়িয়েই কবুল করেছেন এ দৃশ্যটা আগে দেখেননি তিনি। তবে রবিবার বেলাশেষে যখন ব্রিগেডের জনস্রোত বাড়িমুখো হচ্ছে একটু একটু করে, ঠিক তখনই উঠল প্রশ্ন। বাম নেতাদের এই হাসিমুখটা ২মে পর্যন্ত বহাল থাকবে তো? জোটের সলতে তো পাকানো হল, কিন্তু তাতে আলো জ্বলবে তো?
ইতিহাসের প্রশ্নে খুব বেশিদূর যেতে হবে না। শেষ লোকসভা নির্বাচনের আগে, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ -এ ঠিক এইভাবেই ব্রিগেডে বামেদের স্বতঃস্ফূর্ত ভিড় বিরোধীদের কপালে ভাঁজ ফেলেছিল। লাখো মানুষের সেই সমাবেশ বাড়তি মাত্রা পায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কয়েক মিনিটের উপস্থিতি ও দেবলীনা হেমব্রেমের রক্ত গরম করা বক্তৃতায়। উৎসাহ, উদ্দীপনার সেই জোয়ার দেখে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা নতুন করে হিসেব কষতে শুরু করেন, ঠিক কটি আসন পেতে চলেছে বামেরা। কিন্তু সাত দফার ভোটের শেষে ২৩ মে,২০১৯ দেখা যায় বামেদের ঝুলি শূন্য। একটিও আসন পায়নি তারা।
শুধু তাই নয়। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বামেদের শেষ বিধানসভার ২৬ শতাংশ ভোটটা এসে ঠেকে ৭.৫২ শতাংশে। কেন এমন হল, তার একাধিক ব্যখ্যা চালু আছে। কিন্তু একটা কথা ২০১৯-এ প্রমাণ হয়ে যায়, ব্রিগেড গর্জন আর ব্যালট বর্ষণে আকাশপাতাল ফারাক। ব্রিগেডমুখী ওই সকল কর্মী-সমর্থক দলকে ভোট দিলে ভোট সাত শতাংশে নামবে কেন? সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে, এই তুমুল উৎসাহী জনতা কি শেষমেষ নিজের দলকেই ভোট দেয় না? পরিসংখ্যান তো এটাই বলছে যে গত লোকসভায় বামেরাই বামেদের ভোট দেয়নি।
রাজ্যে পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধী যখন ভোটপ্রচার করেন, তখন এর থেকেও বেশি ভিড় হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস সেবার গো হারা হেরেছিল।’ তাঁর মতে, ‘এই ধরনের সমাবেশে জনগণের মধ্যে একটা ইমপ্যাক্ট তৈরি হয়। তবে আমজনতাকে নতুন করে টানতে পারে না এই ধরনের সমাবেশ।’ আবার পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তুলনাটা টানলেন কংগ্রেসের ১৯৯৩-এর ব্রিগেডকে সামনে রেখে। তাঁর কথায়, ‘এমনই ভিড় হয়েছিল কংগ্রেসের ডাকা জনসমাবেশে। কিন্তু ভোটের ফল কংগ্রেসকে হতাশ করে।’