গতকালই চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। চেয়েছিলেন অনুমতি, ভ্যাকসিন কেনার জন্য। এদিনও চিঠি দিলেন তিনি প্রধানমন্ত্রীকে, তবে সেই চিঠিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে কার্যত সাওয়াল করতে দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বাধিকারের পক্ষে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠি দিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তাতে অভিযোগ জানালেন, কেন্দ্রের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক এমন কিছু নির্দেশিকা জারী করেছে যার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আন্তর্জাতিক স্তরে অনলাইন শিক্ষার পরিষেবা না নিতে পারছে না দিতে পারছে। শিক্ষা সংবিধানে রাজ্য ও কেন্দ্রের যৌথ অধিকারের তালিকায় রয়েছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারগুলির মতামত না নিয়ে তাঁদেরকে না জানিয়ে কেন কেন্দ্র অনলাইন শিক্ষার ওপর বিধিনিষেধ জারি করলো। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যত কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় আঘাত। অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করুক মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।
রাজ্যের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গাঁটছাড়া বেঁধে রেখেছে উচ্চমানের শিক্ষা অনলাইনের মাধ্যমে পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছে দিতে। সেখানে বিদেশী অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা বা গবেষকেরা এইন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের কোনও একটি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবেন বা তাঁদের সঙ্গে নিজ অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারবেন। কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্রের মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রক একটি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দেয় যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অনলাইনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্মেলন, সেমিনার ও ট্রেনিং কোর্সের আয়োজন করতে পারবে না বা তাতে অংশ নিতে পারবে না। এর ফলে এ রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পড়ুয়ারা এই সেমিনার ও সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়বস্তু যেমন জানতে পারছে না তেমনি বিদেশী অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা বা গবেষকেরাও পাঠদান করতে পারছেন না বা পড়ুয়াদের সঙ্গে কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারছেন না।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধেই সরব হয়েছেন। তাঁর পাঠানো চিঠিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি জানতে চেয়েছেন যে এই নিষেধাজ্ঞা কী ‘এক দেশ এক ভাবনার’র তত্ত্ব জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস? ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তো গ্রামীণ এলাকা, প্রত্যন্ত এলাকা, ছোট শহর থেকে বড় শহরগুলির পড়ুয়াদের সঙ্গে বিশ্বের শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের সঙ্গে চিন্তাভাবনা বিনিময়ের উৎকৃষ্ট মাধ্যম হয়ে উঠেছে। অথচ সেই মাধ্যমেই নিষেধাজ্ঞা বসাচ্ছে কেন্দ্র যা যুক্ত্ররাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী। তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ও অনুরোধ করছেন অবিলম্বে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বাধিকার ফিরিয়ে দিক কেন্দ্র। একই সঙ্গে আগামী দিনে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা চাপানোর আগে কেন্দ্র সরকার যেন রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের মতামত নেয়। কেননা শিক্ষা সংবিধানে যৌথ অধিকারের তালিকাভুক্ত।