গত সোমবার হুগলির জনসভায় এসে বঙ্কিম ভবনের ‘দুরবস্থা’র কথা বলে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বলেছিলেন, মমতা সরকার এই মহান লেখকের বাড়িকে অনাদরে ফেলে রেখেছেন। আজ নৈহাটিতে কাঁঠালপাড়ায় বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেই জন্মভিটেই ঘুরে দেখলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। আর দেখলেন মোদীজির বক্তব্যের পুরোটাই মিথ্যে ছিল। বরং আগের বাম সরকারের আমলে জঞ্জালের মত এক কোণে পড়ে থাকা বঙ্কিম ভবনকে নতুন করে সাজিয়েছেন এই মমতাই। যোগ্য সম্মান দিয়েছেন সাহিত্য সম্রাটকে।
এদিন বঙ্কিম ভবনে বিজেপি সভাপতি অন্যান্যদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান। যেখানে বসে বন্দেমাতরম লিখেছিলেন ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র, সেই ঘরটিও ঘুরে দেখেন নাড্ডা। বঙ্কিম ভবনের ট্রাস্টি সদস্যদের সঙ্গে কথাও বলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। তাঁকে সাহিত্যসম্রাটের লেখা কিছু বইও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাস্টি সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ না করলেও এদিন জে পি নাড্ডার অভ্যর্থনায় কোনও ত্রুটি রাখল না রাজ্য সরকারের উচ্চ শিক্ষা দফতরের পরিপোষিত বঙ্কিম ভবন গবেষণা কেন্দ্র।
বঙ্কিম ভবন গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আজ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির হাতে স্মারক হিসেবে তুলে দেওয়া হল বন্দেমাতরম গানের দুর্লভ সিডি। যেখানে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া সুরে গীত হয়েছে বন্দেমাতরম। এছাড়াও তুলে দেওয়া হয় ‘বন্দেমাতরম সুউৎস ও বৈচিত্র্য’ নামক একটি অমূল্য স্মারক পুস্তক। বন্দেমাতরম-র বিভিন্ন সুরের ইতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে সেই পুস্তকে।
যে ভবনে বসে বঙ্কিমচন্দ্র ‘বন্দেমাতরম’ লিখেছিলেন, তার হাল নিয়ে সম্প্রতি ক্ষোভের কথা শোনান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বলেন, তিনি শুনেছেন, বঙ্কিম ভবন খুব খারাপ অবস্থায় আছে। মোদীর কথায়, ‘‘সেই বন্দেমাতরম, যা দেশের স্বাধীনতার লড়াইতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নতুন শক্তি জুগিয়েছিল। মাতৃভূমিকে সুজলা, সুফলা করতে প্রত্যেক দেশবাসীকে প্রেরণা জুগিয়েছিল। বন্দেমাতরম শব্দ গোলামির নিরাশায় বেঁচে থাকা দেশকে নতুন চেতনা এনে দিয়েছিল।” এরপরেই হঠাৎ মোদীর মন্তব্যে তৈরি হয় বিতর্ক। একাংশের প্রশ্ন, না জেনে কীভাবে এহেন মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী?
বঙ্কিম ভবন গবেষণা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে গৌতম সরকার আজ সংবাদমাধ্যমকে জানান, “রাজ্য সরকারের উচ্চ শিক্ষা দফতরের পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্কিম ভবন আজ সুরক্ষিত। নাড্ডাজি নিজের চোখে সেটা দেখে গেলে হয়তো বা সাহিত্যসম্রাটের জন্ম ভিটে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে।” নাড্ডা এদিন বঙ্কিমচন্দ্রর জন্মভিটে ঘুরে দেখার পর তাঁদের ভুল ভেঙেছে বলেই মনে করছেন গবেষনা কেন্দ্রের সদস্যরা৷