করোনা আবহেই রাজ্যের বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে জলস্বপ্ন প্রকল্প যথেষ্ট সফল। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের চেষ্টায় কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যের ১০ লক্ষ বাড়িতে এই প্রকল্পে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত আরও বেশি সংখ্যক মানুষের বাড়িতে তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরেও বাড়ি বাড়ি নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছনো হয়নি বলে হুগলির জনসভা থেকে অভিযোগ তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আসানসোল ও দুর্গাপুর পুরসভার জল দফতরের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। দুই পুরসভাতেই নতুন করে বহু সংযোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ শানিয়েছেন তাঁরা।
জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের মাঝামাঝি রাজ্যে শুরু হয় জলস্বপ্ন প্রকল্প। গত বছরের আগস্ট মাসেও করোনা ভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব ছিল। ভাইরাসের আতঙ্ককে দূরে সরিয়ে রেখেই দফতরের কর্মীরা এই প্রকল্পকে সফল করতে মাঠে নেমে পড়েন। ব্লক ও পঞ্চায়েত ধরে শুরু হয় কাজ। সময় যত গিয়েছে কাজের গতিও বেড়েছে। বর্তমানে এই প্রকল্পের মাধ্যমেই ১০ লক্ষ ২ হাজার ৫০০ বাড়িতে নতুন করে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ৫০ লক্ষের বেশি মানুষ এতে উপকৃত হচ্ছেন। প্রতি জেলাতেই এই প্রকল্পে এসেছে সাফল্য।
কিন্তু গ্রামীণ এলাকায় কয়েক মাসের মধ্যে ব্যাপক সংখ্যক বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসার বদলে সমালোচনা শুনে হতাশ করোনাকালে মানুষের বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ করা কর্মীরা। দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, জল স্বপ্ন প্রকল্পে ১০ লক্ষের বেশি বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। যদিও এই সাফল্যের কথা না বলে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সভা থেকে প্রথমে বলেন, বাংলার গ্রামে প্রায় পৌঁনে দু’কোটি পরিবারের কাছে পরিস্রুত নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়ার কথা, অথচ মাত্র দু’লক্ষ বাড়িতে তা পৌঁছেছে। যদিও পরেই তিনি বলেন, কেন্দ্রের তাড়ায় ন’লক্ষ বাড়িতে জলের সংযোগ পৌঁছেছে।
এই বিষয়টিকে সামনে এনেই প্রধানমন্ত্রী রাজ্যবাসীকে বিভ্রান্ত করছেন বলে সুর চড়িয়েছে তৃণমূল। শাসক দলের দাবি, প্রধানমন্ত্রী বাংলার সাফল্যকে ছোট করে রাজ্যকে অপমান করছেন। ভোটারদেরও ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন। আসানসোল পুরসভার জলদফতরের প্রাক্তন মেয়র পরিষদ সদস্য ও বর্তমান পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য পূর্ণশশী রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী পারলে একবার আসানসোল এসে দেখে যান, কত নতুন বাড়িতে আমরা জলের সংযোগ দিয়েছি। দুর্গাপুর পুরসভার জলদফতরের মেয়র পরিষদ সদস্য পবিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মতো মানুষ ভুল তথ্য দিচ্ছেন, এটাই দুর্ভাগ্যের। বস্তুত আসানসোল ও দুর্গাপুরের পরিস্রুত পানীয় জল নতুন নতুন এলাকায় পৌঁছে দিতে লাগাতার কাজ করেছে পুর কর্তৃপক্ষ। তাই জল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা প্রচার করছেন বলেই তৃণমূল নেতাদের দাবি।