চলতি অর্থবর্ষের কেন্দ্রীয় বাজেটে সেস বৃদ্ধি নিয়ে ফের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সরব হলেন বাংলার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। একইসঙ্গে অমিত বাবু জানিয়েছেন, রাজ্য বাজেটে যা যা প্রকল্প প্রস্তাব করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, তার জন্য কেন্দ্রের অনুদানও নিজের দক্ষতায় জোগাড় করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার ফল পাবে রাজ্যবাসী।
কোনও জিনিসের বিক্রয়মূল্যের উপর কর নেয় রাজ্য ও কেন্দ্র উভয় সরকার। কিন্তু সেই একই জিনিসের বিক্রয়মূল্যের উপর সেস বসানো থাকলে সেই অংশটুকু সম্পূর্ণরূপে যায় কেন্দ্রের ঘরে। এই ইস্যুটি তুলেই এদিন নিজের আক্ষেপের কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, “কেন্দ্র সরকার বারবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেস ও সারচার্জ বাড়াচ্ছে। মোদী সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছিল, তখন রাজ্য থেকে কেন্দ্রের মোট রাজস্বের ৮ শতাংশ সেস হিসাবে যেত। এখন সেটা বেড়ে ১৬ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। রাজ্যগুলিকে এভাবে বঞ্চনা করা আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে।”
তাঁর প্রশ্ন, কেন্দ্র কেন সেস বৃদ্ধি করবে? এতে তো রাজ্যের করে ঘাটতি হয়। উল্লেখ্য, কেন্দ্র রাজ্য থেকে করের যে টাকা কেটে নিয়ে যায়, তার ৪১ শতাংশ ফেরত দেয় রাজ্যকে। অর্থমন্ত্রীর অভিযোগ, সেই টাকাও তারা দিচ্ছে না। তাঁর কথায়, “গত বছর রাজ্যের যা পাওনা ছিল তার মধ্যে ১৭ হাজার কোটি টাকা কম দিয়েছে। এ বছরও ১০ হাজার কোটি টাকা কম দেবে বলে আশঙ্কা করছি।” এর মধ্যেই বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন তুলেছিল অসংখ্য প্রকল্প-সহ প্রচুর সামাজিক প্রকল্পে সহায়তার প্রস্তাব করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এত টাকা আসবে কোথা থেকে? রাজস্বের ভাঁড়ারের কী অবস্থা? তারও জবাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এখানেই কেন্দ্রের কাছ থেকে রাজ্যের দাবি আদায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর তৎপরতার কথা বলেন অমিত মিত্র।
অর্থমন্ত্রীর কথায়, “সব বিরোধী দল প্রশ্ন করছে টাকা আসবে কোথা থেকে? বাজেট দেখলে বুঝতে পারবেন অর্থ দফতরের হাতে ১২ হাজার কোটি টাকা আছে খরচ করার জন্য। এ ছাড়া মুখ্যমন্ত্রী নিজে পরিকল্পনা খাতে ব্যয়ের জন্য পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের কাছে প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলেন। তা অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য হয়েছিল। ফলে রাজ্যের দাবিদাওয়া কেন্দ্রের বাজেটে অনুমোদন করা হয়েছে।” এর জেরেই রাজস্ব ঘাটতি বাবদ ৪ বছরে ৪০ হাজার ১১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে অর্থ কমিশন। আগামী আর্থিক বছরে যার ১৭ হাজার ১০৭ কোটি টাকা মিলবে। তার পরের বছর মিলবে ১৩ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা। তার পরের বছর ৮ হাজার ৫৫৩ কোটি। তার পরের বছর আসবে ৫৬৮ কোটি।
একইসঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, কোভিডের পর রাজ্যে অর্থনীতির হাল অনেকটা ফিরছে। রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে। অর্থমন্ত্রীর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী যা যা প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছেন, তার জন্য অর্থের সংস্থান এভাবেই হবে। পাশাপাশি বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী উড়ালপুল, বাড়ি বা স্কুল-সহ অসংখ্য নির্মাণের কথা জানিয়েছেন। এর ফলে সিমেন্ট, লোহার চাহিদা বাড়বে। তার সঙ্গে মানুষের হাতে নগদ টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাতে মানুষ ব্যক্তিগতভাবে স্বনির্ভর হবে বলে দাবি অর্থমন্ত্রীর। সবমিলিয়ে রাজ্যের নয়া বাজেটে সাধারণ জনগণের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে বলেই জানিয়েছেন অমিত মিত্র।