গত বছর সিএএ-এনআরসি আন্দোলনের আবহে দিল্লী হিংসা ঘটনা হোক বা বর্তমানে গোটা বিশ্বে সাড়াজাগানো কৃষি আন্দোলন, ভারতবর্ষের মতো গণতন্ত্রে জনসাধারণের মৌলিক অধিকার বারংবার পড়েছে প্রশ্নের মুখে। এদিকে ইতিমধ্যেই কৃষি আন্দোলনের সমর্থন টুইট করতে দেখা গিয়েছে পপস্টার রিহানা ও সমাজকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের মতো বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্বকে। আর তাতেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে মুখ পুড়েছে ভারতের। সম্প্রতি ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ইকনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) গণতন্ত্র সূচকে ফের ভারতের পতনে তোলপাড় রাজ্য-রাজনীতি। সূচক অনুযায়ী, বর্তমানে দুই ধাপ নেমে ভারত দাঁড়িয়েছে ৫৩ তম স্থানে, যা সমগ্র দেশবাসীর কাছে যথেষ্ট লজ্জার বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
সূত্রের মতে, ২০১৯ সালে সূচকে ৫১তম স্থানে ছিল ভারত। এরপর এনআরসি-সিএএ আন্দোলন ও দিল্লী দাঙ্গার মত হিংসাত্মক ঘটনার জেরে ছেদ পড়ে ভারতীয়দের স্বাভাবিক জীবনযাপনে। ইআইইউয়ের মতে, প্রশাসনিক অনাচার ও নাগরিকদের মৌলিক অধিকার খর্বের জেরেই সূচকে ভারতের এই বড়সড় অধঃপতন। ইআইইউয়ের রিপোর্ট মোতাবেক, ২০১৪ সালে গণতন্ত্র সূচকে ২৭তম স্থানে থাকা ভারতের সর্বমোট ফলাফল ছিল ৭.৯২, যা ২০২০ সালে কমে হয়েছে ৬.৬১!
ইআইইউয়ের রিপোর্ট অনুসারে, ১৬৭টি দেশের মধ্যে সম্পূর্ণ গণতন্ত্রিক দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে ২৩টি দেশ, ৫২টি ত্রুটিযুক্ত গণতন্ত্র, ৩৫টি দেশ মিশ্র শাসন এবং ৫৭টি দেশ স্বৈরাচারী দেশের তকমা পেয়েছে। জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও ব্রাজিলের পাশাপাশি ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ হয়েছে ভারতের নাম। পাশাপাশি মোদী সরকার কর্তৃক সৃষ্ট ধার্মিক বিভেদ যে অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের ভাবধারকে নষ্ট করছে, তাও বলা হয়েছে ইআইইউয়ের রিপোর্টে।
ইআইইউ সূচক অনুসারে, তালিকার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। ক্রমান্বয়ে রয়েছে আইসল্যান্ড, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড এবং কানাডা। অন্যদিকে ভারতের প্রতিবেশীদের মধ্যে, ৬৮তম স্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, ৭৬তম স্থানে বাংলাদেশ, ভুটান ৮৪তম এবং ১০৫-এ রয়েছে পাকিস্তান। প্রতিবেশীদের থেকে ভারতের অবস্থা ভাল হলেও অবনমনের পরিমাণ যে বাড়ছে, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।
অস্ট্রেলিয়ার ন্যায় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানও উঠে এসেছে পূর্ণ গণতন্ত্রের তালিকায়, ইআইইউয়ের রিপোর্টে বলা হয়েছে এমনটাই। ইআইইউয়ের মতে, ভারত সহ সম্পূর্ণ এশিয়াতেই করোনা দমনের লক্ষ্যে এগোতে গিয়ে নাগরিক স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে নিষ্পেষিত করেছে প্রশাসন। তবে ভারতের থেকেও চীন ও সিঙ্গাপুরের মত দেশেও যে নাগরিক জীবনে সরকারি হস্তক্ষেপের পরিমাণ প্রভূত বেড়েছে, তাও জানিয়েছে ইআইইউ।