ফের হোয়াটসঅ্যাপ নিয়ে সংশয় ও উদ্বেগ বাড়ল গ্রাহকদের মধ্যে। শোনা যাচ্ছে, একজন ভারতীয় হিসাবে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করলে, মোটেই সুরক্ষিত নয় ব্যক্তিগত তথ্য ও মেসেজ। কিন্তু ইউরোপীয় ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক তার বিপরীত। এই খবর প্রকাশ্যে আসায় অ্যাপটির বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরও বাড়ল। স্বভাবতই হোয়াটসঅ্যাপ আনইনস্টল করে অনেকেই দ্বারস্থ হয়েছেন সিগন্যাল ও টেলিগ্রামের। তবে এ সবের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপও নেমে পড়েছে তাদের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে। বিভিন্ন জায়গায় তারা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করতে শুরু করেছে, ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা সম্পর্কে তারা কতটা চিন্তিত। এবং সব জায়গাতেই বলা হচ্ছে, হোয়াটসঅ্যাপ কোনও ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত পরিসরে আড়ি পাতছে না। যদিও তাতে আতঙ্ক কাটছে না গ্রাহকদের।
সম্প্রতি, ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের বিষয়ে নীতি বদলেছে হোয়াটসঅ্যাপ। এরপর হোয়াটসঅ্যাপের তরফে জানানো হয়েছে, ইউরোপে এই বিষয়টি নিয়ে তাদের পলিসির বিশেষ পরিবর্তন হচ্ছে না। তবে ভারতে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর তথ্য ফেসবুকের কাছেও চলে যাবে বলে জানিয়েছিল মেসেজিং অ্যাপটি। কিন্তু ইউরোপে তা হবে না। সেখানকার ব্যবহারকারীর অর্থনৈতিক লেনদেন, অনলাইনে কেনাকাটা বা লোকেশন সার্ভিসের ডেটা হোয়াটসঅ্যাপ তাদের মূল কোম্পানি ফেসবুককে দেবে না বলেই জানিয়েছে। তবে কেন এই ভিন্ন নীতি ? সূত্র অনুযায়ী, এর পিছনে রয়েছে ইউরোপের ‘দ্য জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন’ বা জিডিপিআর-এর ভূমিকা। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়ে এই আইন বিশেষ গুরুত্ব দেয়। ইউরোপিয়ান কমিশন ২০১৭ সালে ফেসবুকের বিরুদ্ধে ১১০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা ধার্য করে এই আইন ভাঙার জন্য। ফেসবুকের অপরাধ ছিল, তারা জানায়নি, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর ফেসবুকের কাছেও চলে যাবে। এই ঘটনার পর থেকেই ইউরোপে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা বিষয়ে রীতিমতো সতর্ক হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ।
তা হলে ভারতের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম কেন ? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এর কারণ ভারতে সাইবার আইনে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে এখনও সে ভাবে কড়া পদক্ষেপ নেই। কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৯ সালে ‘পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন বিল’ বা পিডিপি বিলের প্রস্তাব করেছে। কিন্তু তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি যৌথ পার্লামেন্টারি কমিটি বা জেপিসি। ফলে এরই ফাঁকতালে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের অন্দরে ঢুকে পড়তে পারছে হোয়াটসঅ্যাপ। শুধু তাই নয়, সে তথ্য তারা পাঠিয়ে দিচ্ছে ফেসবুকের কাছেও। ভবিষ্যতে এই আইন বলবৎ হলে, হোয়াটসঅ্যাপ বা তাদের মতো অন্য অ্যাপের নীতিতে পরিবর্তন আসবে বলেও মনে করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।
তবে ভারতীয়দের হাতে তথ্য সুরক্ষিত রাখার কোনো রাস্তাই নেই, এমনটা কিন্তু নয়। তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ২০০০-এর ৪৩ এ ধারায় ব্যক্তিগত তথ্যের সংরক্ষণ এবং বিনা অনুমতিতে তাকে ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে কী কী শাস্তি হতে পারে, তার উল্লেখ স্পষ্ট ভাবেই আছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীকে প্রমাণ করতে হবে, তাঁর নিজের তথ্য নিয়ে এ ধরনের কিছু ঘটেছে। তাতে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। কিন্তু এক জন সাধারণ ব্যবহারকারীর পক্ষে এই আইনি জটিলতা সামলানো কঠিন এবং প্রমাণ করা আরও কঠিন বলেই, এখনও তেমন কিছু হয়ে ওঠেনি বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।