কৃষি আন্দোলনের জন্যে গত প্রায় ২ মাস ধরে তাঁরা ঘরবাড়ি ছেড়ে দিল্লী সীমান্তে রাস্তায় বসে আছেন। বুধবার সেই দিল্লী-হরিয়ানা সীমান্তে আন্দোলনকারী কৃষকরা তিন কৃষি আইনের কপি পুড়িয়ে ‘লোহরি’ পালন করেন। একইসঙ্গে শপথ নিলেন, কৃষি আইন প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন না। পাশাপাশি কলকাতার ধর্মতলাতেও দেখা গেল আইনের কপি পোড়ানোর ছবি।
তিন কৃষি আইনের রূপায়ণে স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার ও ক্ষুব্ধ কৃষক সংগঠনগুলির কথা শোনার জন্য গতকাল একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির সকলেই সরকারের কৃষি আইনের পক্ষে বলে অভিযোগ উঠেছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ২৪ ঘণ্টা পরেও কৃষকরা আন্দোলন থেকে সরেননি। তাঁরা আদালতের কমিটির সামনে যাবেন না বলেও অনড় রয়েছেন।
আন্দোলনে ইতি না পড়লেও, বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সরকারের সামনে একটা রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে। কারণ, কৃষক সংগঠনগুলি তিন আইন প্রত্যাহার ছাড়া আর কিছুই মানবে না বলে অবস্থান নেওয়ায়, সরকার কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনে স্থগিতাদেশ জারির করার পরে এখনই আর কৃষি আইন সংস্কারের পক্ষে প্রচারে না যাওয়ার নীতি নিচ্ছে বিজেপি।
গত রবিবার হরিয়ানার করনালে মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের কিসান মহাপঞ্চায়েতে হাঙ্গামা হয়। বিজেপির শীর্ষনেতারা আপাতত এই রকম সভা করতে নিষেধ করেছেন। গত সন্ধ্যায় খট্টর ও উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্মন্ত চৌটালা দিল্লীতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন। হরিয়ানার শিক্ষামন্ত্রী চৌধুরী কঁওয়র পাল জানান, করনালের হিংসার পরে অমিত শাহ পরামর্শ দিয়েছেন, কৃষি আইনের প্রচারে এখন আর সভা করার দরকার নেই। এদিকে কৃষকদের আন্দোলন অব্যাহত থাকায় চৌটালার জননায়ক জনতা পার্টির উপর বিজেপির সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের প্রবল চাপ তৈরি হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট কৃষি আইনে স্থগিতাদেশ জারি করার পরে ১৫ জানুয়ারি কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে সরকার কী কৌশল নেবে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রী কৈলাস চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকার আলোচনার জন্য তৈরি। এ বার কৃষক সংগঠনগুলি ঠিক করুক, তাঁরা কী চান।’’ কৃষকদের সঙ্গে আলোচনারত মন্ত্রিগোষ্ঠীর সদস্য বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী সোমপ্রকাশের বক্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট যখন কমিটির সামনে সকলকে হাজির হতে বলেছেন, তখন সেই রায়কে সকলের সম্মান করা উচিত।’’ কিন্তু কৃষক নেতাদের যুক্তি, এখানে সুপ্রিম কোর্টকে অসম্মান করার কোনও প্রশ্নই নেই। কারণ, তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে কোনও আর্জিই জানাননি। আর সুপ্রিম কোর্ট আইন খারিজ করেনি। আপাতত স্থগিত রেখেছে।