কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে নভেম্বরের শেষ দিক থেকে দিল্লী সীমানা লাগোয়া এলাকায় আন্দোলনে নেমেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কৃষকরা। সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পরেও কোনও সমাধানসূত্র না মেলায় প্রতিদিনই তা ধারেভারে আরও বাড়ছে। এবার যেমন মোবাইল পরিষেবার লাইন কেটে, লোহার ব্যারিকেডের ওপর দিয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে দিয়ে, অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিন পালন ভেস্তে দিয়ে কৃষকরা এখন মোদী সরকারের তিন কৃষি আইন রুখতে মরিয়া।
আম্বানি-আদানিদের স্বার্থে মোদী সরকার তিন কৃষি আইন এনেছে, এই অভিযোগ তুলে কৃষক নেতারা সেই কর্পোরেট সংস্থাগুলিকেও বয়কটের ডাক দিয়েছে। রিলায়্যান্সের মল, পেট্রল পাম্প, আদানি গোষ্ঠীর পণ্য বয়কটের সঙ্গে রিল্যায়্যান্সের জিয়োর মোবাইল সংযোগ ছেড়ে দেওয়ারও ডাক দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। তারই জেরে জিয়ো-র মোবাইল টাওয়ারে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া শুরু হয়। পাঞ্জাব জুড়ে বিক্ষোভের এই বহিঃপ্রকাশ বাড়তে থাকায় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহকে গতকাল মাঠে নামতে হয়।
অমরিন্দর কৃষকদের অনুরোধ করেছেন, এ সব না করতে। কারণ এতে সাধারণ মানুষের হেনস্থা বাড়বে। কোভিডের সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে পড়াশোনা থেকে শুরু করে পাঞ্জাবের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও এর প্রভাব পড়বে। সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনে কৃষকরা পাঞ্জাবের গ্রামে গ্রামে লাউডস্পিকার ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের কাছে জিও পরিষেবা ছাড়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। পাঞ্জাবে প্রায় ১.৭ কোটি জিও সংযোগ রয়েছে। প্রায় ৯ হাজার মোবাইল টাওয়ার রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২০০ টাওয়ারে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার ভগৎ সিংহের ভাইপো অভয় সিংহ সাঁধু হরিয়ানা-দিল্লীর সীমানার সিংঘুতে কৃষক বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। সত্তরের দশকের চিপকো আন্দোলনের নেতা সুন্দরলাল বহুগুণা সমর্থন জানিয়েছেন কৃষকদের আন্দোলনকে। পাঞ্জাবের ফাগওয়ারায় বিজেপির নেতারা একটি হোটেলে প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মবার্ষিকী পালন করছিলেন। ভারতীয় কিসান ইউনিয়ন (দোয়াবা) হোটেলটি ঘেরাও করে ফেলে। বিজেপি নেতাদের পিছনের দরজা গিয়ে পালিয়ে যেতে হয়। বিক্ষোভকারীদের সরাতে পুলিশকে লাঠিও চালাতে হয়।
উত্তরাখণ্ডের কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল করে দিল্লীর দিকে যাওয়ার পথে উধম সিংহ নগরের কাছে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়ে। এরপর ব্যারিকেড ঠেলে এগোনোর চেষ্টা করে ট্রাক্টর। উল্টো দিকে কয়েক ডজন পুলিশকর্মী প্রাণপণে সেই ব্যারিকেড ঠেলে ধরে রাখার চেষ্টা করেন। চার পাশে কয়েকশো বিক্ষোভকারীর তুমুল চিৎকারে তখন কান পাতা দায়। দু’পক্ষে খানিক ক্ষণ ঠেলাঠেলির পরে পুলিশের পেশিশক্তি হার মানে ট্রাক্টরের হর্স-পাওয়ারের কাছে। পুলিশ হাল ছেড়ে সরে দাঁড়াতেই লোহার ব্যারিকেড দুমড়ে, তার ওপর দিয়ে ট্রাক্টর চালিয়ে এগিয়ে যান কৃষকরা।